ট্রাম্পকে অভিশংসনের গুঞ্জন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসনের শিকার হতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। অপসারিত সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকে নিয়ে এফবিআই’র তদন্তে হস্তক্ষেপ এবং রাশিয়ার কাছে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর এই গুঞ্জন জোরালো হয়েছে।

সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বলেছেন, এসব অভিযোগ সত্য হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হতে পারে। রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, পরিস্থিতি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির দিকে যাচ্ছে।

এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তথ্য ফাঁসের ঘটনা এবং ফ্লিনকে নিয়ে তদন্তে প্রভাব খাটানোর ঘটনা সত্য নয়। কিন্তু অনেক রিপাবলিকান ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসাজস নিয়ে স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের কাছে কোনো তথ্য ফাঁস করেনি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত এফবিআই প্রধান নিয়োগ করার নির্দেশ দিলেও অনেকেই এ বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছেন।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ এবং বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যায়। তবে ‘বড় কোনো অপরাধ’ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে। অভিযোগগুলো সত্য হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবিধান রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

অভিশংসনের গুঞ্জন
নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং সিএনএন মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে এফবিআই প্রধান কোমির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখন তিনি কোমিকে বলেন, ফ্লিন একজন ভাল মানুষ। আশা করি আপনি ফ্লিনের বিষয়ে তদন্ত থেকে সরে আসবেন কিংবা তাকে মুক্তি দিবেন। কোমি সেই প্রস্তাব রাখেননি। ট্রাম্প অনুরোধ করার পর বৈঠক শেষেই একটি নথিতে এই তথ্যটি লিখে রেখেছিলেন কোমি। অল গ্রিন নামের এক কংগ্রেসম্যান জানিয়েছেন, তিনি বুধবারই কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসন করার প্রস্তাব দেবেন।

আইএসের ওপর বোমা হামলার বিষয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দাদের সরবরাহ করা তথ্য রাশিয়াকে জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ট্রাম্প কোনো গোপন তথ্য তাদের দেননি। এটা আমি প্রমাণ করতে পারি। আমাদের কাছে ট্রান্সস্ক্রিপ্ট আছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান, রিচার্ড নিক্সন এবং বিল ক্লিনটনের উপদেষ্টা ডেভিড গারগেন বলেছেন, ফ্লিনের রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করার অনুরোধ এবং রাশিয়ার কাছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তথ্য ফাঁসের ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে তিনি অভিশংসনের শিকার হওয়ার কাজ করেছেন।

ডেভিড গারগেন মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তদন্তে হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, বিল ক্লিনটনের অভিংশসের প্রক্রিয়া দেখার পর মনে করেছিলাম, আমি আর কখনো এই পরিস্থিতি দেখবো না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা আরেকটি অভিশংসনের এলাকায় প্রবেশ করছি। ডেভিড গারগেনের সময়ে রিচার্ড নিক্সন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং বিল ক্লিনটন নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিশংসনের মুখে পড়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি অভিশংসিত হননি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট অভিংশসিত হননি।

বারাক ওবামার নির্বাচনী ব্যবস্থাপক এবং সাবেক উপদেষ্টা ডেভিড অ্যাক্সেলরড বলেন, আমি এখনো অভিংশসন নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। তবে যদি কোমির তথ্য সঠিক হয় তাহলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের পর্যবেক্ষণ কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান জ্যাসন চ্যাফেটস জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং কোমির আলাপ-আলোচনার সকল তথ্য কমিটির কাছে উপস্থাপন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি এফবিআই দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি!
সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এটা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির দিকে যাচ্ছে। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ছিল ১৯৭০ এর দশকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি। নির্বাচন প্রচারাভিযান চলাকালে ১৯৭২ সালের ১৭ জুন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল ও প্রশাসনের ৫ ব্যক্তি ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াটারগেট ভবনস্থ বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের সদর দফতরে আড়িপাতার যন্ত্র বসায় এবং নিক্সনের প্রশাসন কেলেঙ্কারিটি ধামা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

এ ঘটনার ফলে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৭৪ সালের ৯ই আগস্ট প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। কেলেঙ্কারির ঘটনায় নিক্সনের যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের এই পদ থেকে পদত্যাগের ঘটনাটি প্রথম। এই ঘটনায় বিচার ও দোষী সাব্যস্থ হওয়ার পর মোট ৪৩ জন ব্যাক্তিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয় যাদের মধ্যে কয়েক ডজন ছিলেন নিক্সন প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। অন্যদিকে দেশের ভিতর বিতর্কের মুখে থাকলেও বিদেশ সফরে গিয়ে ভাল কিছু করে দেখাতে চান ট্রাম্প। চলতি মাসেই তিনি প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, বিবিসি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট