টেঁটাযুদ্ধে খুন : বকশীগঞ্জে গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামছাড়া শতাধিক পরিবার

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

জামালপুরের বকশীগঞ্জে টেঁটাযুদ্ধে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। পরিবারের নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু সবাই এখন পলাতক। গত ২৭ এপ্রিল সকালে উপজেলার আলিরপাড়া গ্রামে ছাগল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এ ঘটনায় নিহত দুলাল মিয়ার ভাই রেজাউল বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

জানা যায়, ২৭ বুধবার আলিরপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একই গ্রামের আবু মিয়ার একটি ছাগল তার মোটরসাইকেলের নিচে চাপা পড়ে। এতে ছাগলটির একটি পা ভেঙে যায়। জরিমানা চাওয়ায় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও আবু মিয়ার লোকজনের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। আমিনুল বিষয়টি আলিরপাড়া হাইস্কুলের সভাপতি আলহাজ্ব গাজী আমানুজ্জামানকে জানান। তার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে গাজী আমানুজ্জামান ১০/১২ জন লোক নিয়ে আবু মিয়ার বাড়ির সামনে যান এবং এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চান। এক পর্যায়ে গাজী আমানুজ্জামানের সাথে আবু মিয়ার লোকজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। দু-পক্ষই মারমুখী অবস্থান নেয়। বগারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রামাণিক মাসুম বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

বৃহস্পতিবার সকালে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষই দেশীয় লাঠিসোঠা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে টেঁটার আঘাতে আবুল কাশেম গুরুতর আহত হলে তাকে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। আবুল কাশেমের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আবু মিয়ার পক্ষের লোকজন বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় নিহত আবুল কাশেমের লোকজন উত্তেজিত হয়ে আসামিদের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

আবুল কাশেম ওরফে দুলাল মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বগারচর ইউপির সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম লিচুসহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ জন। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রামাণিক মাসুমও গ্রেপ্তার আতঙ্কে পলাতক রয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের ১০ সদস্যের একটি টিম সার্বক্ষণিক এলাকায় পাহাড়ায় রয়েছে।

এলাকায় মানুষ না থাকায় আসামিদের বাড়িঘরে থাকা গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ কোনো জিনিসপত্রই নেই। প্রতিটি ঘরের দরজা, জানালা ভাঙা। আবার কিছু ঘর তালাবদ্ধ। আসামি পক্ষের দাবি মামলার বাদী রেজাউল করিমের লোকজন তাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে। তবে বাদীপক্ষের দাবি আসামি ও তাদের স্বজনরাই বাড়িতে থাকা মালপত্র নিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী রেজাউল করিম বলেন, আমার ভাই মারা গেছে। ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে আমরা দিশেহারা। আমরা কেন তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করতে যাব।

এ ব্যাপারে জানতে মামলার ১৫ নম্বর আসামি বগারচর ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেকুর রহমান প্রামাণিক মাসুম মুঠোফোনে বলেন, বুধবার যখন উভয়পক্ষ মারমুখী অবস্থান নেয় আমিই তখন প্রথমে পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানাই এবং পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বৃহস্পতিবারও সংঘর্ষের ঘটনাটি আমিই ফোনে বকশীগঞ্জ থানার ওসিকে জানাই। তাছাড়া ঘটনার দিন আমি এলাকায়ও ছিলাম না। আশাকরি পুলিশি তদন্তে আমি ন্যায়বিচার পাব।

এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার ওসি মো. সোহেল রানা বলেন, সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং নিরপরাধ কোনো মানুষ হয়রানির শিকার হবে না বলে জানান তিনি।সূত্র: কালের কণ্ট