টিয়ারসেল দমাতে পারেনি নীলাকে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ১৩ই মার্চ রাতে দ্রুত ঘুমাতে গিয়েছিলাম পরের দিন (১৪ই মার্চ) সকালে আন্দোলনে যাবো বলে। সকালে যখন আন্দোলনে আসব তখন কোন সঙ্গী পাচ্ছিলাম না।

একা একা আসতে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু ফিরে যাইনি। কলেজের হোস্টেল থেকে বের হয়ে সোজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে চলে এসেছিলাম। পরে রাস্তায় দেখি বিভিন্ন শত শত শিক্ষার্থী স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগের দিকে যাচ্ছে।

রাস্তায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে ব্যারিকেড দেয় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ‘‘এসময় আমি রাস্তার মাঝখানে বসে ছিলাম। পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে; কিন্তু আমি সেখান থেকে নড়িনি। এ সময় শুধু ভয় হচ্ছিলো যদি মরে যাই লাশ টা বাড়ি ফিরবে তো?”

এভাবে কথাগুলো বলছিলেন সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ নামিয়ে আনাসহ ৫ দফা দাবিতে গত ১৪ই মার্চ মিছিলে যোগ দেওয়া রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার লুমা (নীলা)।

এই আন্দোলনকারী পুলিশের লাঠিচার্জের ভয় না করে রাস্তায় বসে ছিলেন। এমনকি পুলিশের টিয়ারসেল ও টিয়ারসেলের ধোঁয়ার মধ্যেও সে রাস্তা থেকে ওঠেনি। পরে পুলিশ তাকে টেনে ছিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলে হয়। তার এই ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম সহ সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ভাইরাল হয়।

লুৎফুন্নাহার লুমা (নীলা) বিডি নিউজআওয়ারকে জানান, ছোট বেলায় বেড়ে উঠেছেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে। এসএসসি ও এইচএসসি সেখানে শেষ করে ভর্তি হন ইডেন মহিলা কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে। বর্তমানে সে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। বাবা ছিলেন শিক্ষক। কিছু দিন আগে তিনি মারা গেছেন। মা গৃহিনী। দুই বোনের মধ্যে সে নীলা সবার বড়।

 

তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখছি মেধা থাকা সত্বেও তার পরিবারের অনেক সরকারি চাকুরিতে সুযোগ পাচ্ছে না। পরে জানতে পারি সরকারি ৫৬% কোটা আছে। যার কারণে তার পরিবার বা আত্নীয় স্বজনের মধ্যে অনেকের সরকারি চাকুরির সুযোগ পান না। সাম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু আন্দোলনের পোষ্ট ফেসবুকে দেখার পর আন্দোলনে অংশ নেবার ইচ্ছে হয় বলছিলেন নীলা।

তিনি আরোও জানান, শাহবাগ থেকে যখন টিএসসি হয়ে শিক্ষা বোর্ডের সামনে সেদিন অবস্থায় নেবার জন্য সবাইকে রাস্তার মাঝে বসতে বলা হয়েছিল। সেদিন প্রচুর রোদ ছিল। রোদের কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলেও সেই তোয়াক্কা না করে আমি রাস্তায় বসে পড়ি।

এসময় কেউ একজন আমাকে বলছিল জুতা পড়ুন কখন পুলিশ আবার হামলা করে। এ কথা শুনে শুধু হেসেছিলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছিলাম যা হবার হয়ে যাক আমি এখান থেকে এক চুল পরিমাণ ও নড়বো না। বাঁচতে হলে বৈষম্যহীন ভাবে বাঁচবো নাই মৃত্যু হোক। নিজের কথা রেখেছিলাম; পুলিশ যখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছিল তখন ড্যাব ড্যাব করে তা দেখছিলাম।

লুৎফুন্নাহার লুমা (নীলা) বলেন, কতটা নির্মম হলে এটা করতে পারে তা ভাবছিলাম। শ্লোগান দেওয়া বন্ধ করিনি। যখন দেখছিলাম চোখ মুখ জ্বলতে শুরু করেছে তখন মুখে কাপড় পেঁচিয়ে দিয়েছিলাম। কোন দিকে তাকাইনি। নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলাম। দুইজন মহিলা পুলিশ এসেও আমাকে টেনে তুলতে পারছিল না। তখন চারজন মিলে টেনে তুলেছে আমাকে। একটুও ভয় পাইনি।

 

পুলিশের ভ্যানে তুলতে চাচ্ছিলো, কিন্তু ভ্যান খুঁজে পাচ্ছিল না। টিয়ারশেলের ফলে পুলিশ গুলোর ও অবস্থা দেখার মত ছিল। এত কিছুর মধ্যেও তারা আমাকে টেনে নিতে যাচ্ছিল। আমি সুন্দর করেই বলেছি দেখুন আমি কোন খুনি কিংবা অপরাধী নই। আমাকে আপনারা ছাড়ুন আমি পালিয়ে যাবো না। আপনাদের সাথেই আছি। আমি তাদের সাথেই হাটছিলাম।

প্রচুর কষ্ট হচ্ছিলো শ্বাস নিতে পারছিলাম না। চোখ দুটো মনে হচ্ছিলো জ্বলে নষ্ট হয়ে যাবে। অবস্থা শোচনীয় দেখে এক পর্যায়ে তারা আমাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। আমি স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে রাজি ছিলাম। যদি গুলিও চালাত তবুও আমি ঠিক একই কাজ করতাম। ন্যায়ের পক্ষে থাকতে একটু ও ভয় নেই। শুধু ভয় হচ্ছিলো যদি মরে যাই লাশ টা বাড়ি ফিরবে তো? পরে সন্ধ্যার পর থানা থেকে ছাড়া পাই।

তিনি বলেন, ‘কোটার বিপক্ষে আমি নই। তবে কোটা সংস্কার হবার প্রয়োজন।আমার চাকুরির জন্য আন্দোলনে নামি নি। অনেককে দেখেছি কোটার কারণে তারা চাকুরি বঞ্জিত। ফলে তাদের চাকুরির আহাজারি কেউ বোঝে না। আমি আশা করি আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন।

রাজনীতির কোন ইচ্ছে আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না কোন সময় রাজনীতি করব এমন বিষয় ভাবি নি। হয়থ ভবিষ্যতেও ভাববো না। তবে শিক্ষার্থীদের যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে আমি রাস্তায় থাকব।

আ/র