টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গরিব ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে খুদে শিক্ষার্থীরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

স্কুলে তখন ভারতের জাতীয় সেবা প্রকল্পের শিবির চলছে। শিবিরে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা হাজির হলো শিক্ষকদের কাছে। তাদের আবেদন, স্যার, আজকের টিফিন আমাদের দিতে হবে না। তার বদলে টিফিনের জন্য যে টাকা বরাদ্দ আছে, তা দিয়ে দুঃস্থদের খাতা, কলম কিনে দিতে চাই আমরা।

এ কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষকরা। তার পরই মুগ্ধ হয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের মহৎ চেষ্টায়। আর দেরি করেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে-সঙ্গে তারা সিদ্ধান্ত নেন, শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার। শিক্ষার্থীদের এক দিনের টিফিনের টাকাতেই এলাকার কিছু দুঃস্থ শিক্ষার্থীর খাতা, কলম, পেন্সিল, স্লেট ইত্যাদি কেনা হয়। হাতে সে সব পেয়ে আপ্লুত হয় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ওই ছাত্রছাত্রীরা।

শান্তিপুরের বিবেকানন্দনগরের বিবেকানন্দ হাইস্কুলে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় সেবা প্রকল্পের শিবির। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই স্কুলে জাতীয় সেবা প্রকল্পের বাহিনী তৈরি হয়েছে।

একাদশ শ্রেণির একশ জন শিক্ষার্থী আছে এই দলে। স্কুলের পাশেই গোবিন্দপুর মাঠপাড়া গ্রাম। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের দীনতা আগেই নজরে এসেছিল শিক্ষার্থীদের। নিজেদের শিবিরে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ থেকে শুরু করে সাপের ছোবল মরনোত্তর চক্ষুদান- সহ নানা বিষয়ে সচেতনতা চালাচ্ছিল তারা। তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ওই দরিদ্র, অসহায় পরিবারগুলোর শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর।

সারাদিনের শিবিরে তাদের জন্য টিফিন বরাদ্দ রয়েছে। তাতে শুকনো খাবারের পাশাপাশি আছে ভাত, ডাল, তরকারি, ডিম। এক দিন সেই টিফিন না খেয়ে টিফিনের টাকা দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার সামগ্রী কেনাতে ব্যয় করার কথা ভাবে তারা।

স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ধৃতব্রত সরকার, শালিনী মণ্ডলরা বলেন, আমাদের স্কুলের কাছেই ওই গ্রাম। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। কিন্তু পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। বইখাতা, কলম কিনতে পারে না। আমরা তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, এক দিনের টিফিনের টাকা দিয়ে তাদের পাশে যতটা পারি দাঁড়াব।

টিফিনের টাকায় কেনা হয় খাতা, কলম। ৪০টি পরিবারের শিক্ষার্থীদের হাতে সেগুলো তুলে দেয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অতনু চৌধুরী বলেন, ছেলেমেয়েরা যে এভাবে ভেবেছে সেটা আমদের একটা বড় পাওনা।

স্কুলের জাতীয় সেবা প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পল্লব সরকারের কথায়, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সমাজের জন্য কাজ করার কথা বলি আমরা। সেটা মনে রেখে তারা এগিয়ে এসেছে দেখে ভালো লাগছে।