টানা দুই হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘হাল ছাড়ছি না’

 সিল্কসিটি স্পোর্টস ডেস্ক :

বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিগার সুলতানা বলেছিলেন সেমি-ফাইনাল স্বপ্নের কথা। কিন্তু টানা দুই পরাজয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। সম্বাবনার রঙ তাই এখন অনেকটাই ফিকে। তবে এখনই স্বপ্নকে তাড়া করা ছাড়তে চান না নিগার। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক অনুরোধ করলেন, তাদের ওপর যেন ভরসা রাখা হয়।

আইসিসি উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াই জমাতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হেরেছে বড় ব্যবধানে।

৫ দলের গ্রুপে ৪ ম্যাচের ২টি হেরে যাওয়ার পর গ্রুপ পর্ব উতরানো কঠিন। তবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পর সংবাদ সম্মেলনে নিগার বললেন, এখনই তারা লড়াইয়ে পিছু হটতে চান না।

“বাংলাদেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা আছে আমাদের প্রতি। তাদের হতাশ হওয়ারই কথা। তবুও বলব যে, আমরা হাল ছাড়ছি না, আপনারাও হাল ছাড়বেন না। আমরা কষ্ট করে যাচ্ছি, যদি সবকিছু ঠিক থাকে, আল্লাহ রহমত করেন, প্রক্রিয়া অনুসরণ যদি করতে পারি ও দল হিসেবে যদি পারফর্ম করতে পারি, তাহলে আমরা পরের ম্যাচে ভালো করতে পারি।”

ক্রিকেটের চিরকালীন অনিশ্চয়তা মাথায় রাখলেও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ছিল সামান্য। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি নয়। নিগারের দল পারেনি তেমন কিছুও। সেখানে আবারও উঠে আসছে ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা। বরাবরের মতো ব্যাটিংয়েই মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের সম্ভাবনা। পুরো ২০ ওভার খেলে দল করতে পারে স্রেফ ১০৭ রান!

এই ১০৭ রানের মধ্যে নিগার নিজেই করেন ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫০ বলে ৫৭ রান। কিন্তু আর কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ককে। ১১ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ক্রিজে গিয়ে ডারিস ব্রাউনকে টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন নিগার। পরে অ্যালানা কিংয়ের তিন বলের মধ্যে মারেন চার ও ছক্কা।

কিন্তু আরেক পাশে উইকেট পড়তেই থাকে। নিগার একপ্রান্তে টিকে থেকে শেষ পর্যন্ত আউট হন শেষের আগের ওভারে। তিনি আর স্বর্ণা আক্তার (১২) ছাড়া দলের আর কেউ দু অঙ্ক ছুঁতে পারেনি।

নিগার সুলতানাও বললেন, এই পুঁজি নিয়ে লড়াই করা কঠিন।

“ব্যাটিংয়ে আমরা দুই ওপেনারকে দ্রুত হারিয়েছি। এরপর আমি চেষ্টা করছিলাম সোবহানার সঙ্গে সঙ্গে জুটি গড়ার ও পাওয়ার প্লেতে রান তোলার। কারণ এই ধরনের উইকেটে পাওয়ার প্লেতে ৪০-এর বেশি রান তুলতে পারলে দলকে তা সহায়তা করতে পারে। তবে আমরা তা পারিনি।”

“আমি চেষ্টা করছিলাম বড় ভূমিকা রাখতে ও জুটি গড়তে। কিন্তু জুটিতে সঙ্গী কাউকে পাইনি। স্বর্নাও চেষ্টা করছিল কিছু রান করতে কিন্তু বাউন্ডারি আদায় করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে এই ধরনের উইকেটে অন্তত ১৪০ রানের বেশি করতে হতো আমাদের।”

রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া স্রেফ ২ উইকে হারালেও ম্যাচ জিততে তাদের খেলতে হয় ১৮.২ ওভার পর্যন্ত। তবে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ ছিল বলেই মনে করেন নিগার।

“উইকেট ভালো ছিল। বল সুন্দরভাবে ব্যাটে আসছিল। আমি চেষ্টা করছিলাম উইকেটে টিকে থাকতে ও রান করতে। প্রক্রিয়া অনুসরণ করার চেষ্টা করছিলাম এবং ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।”

টি-টোয়েন্টিকে একটি সেঞ্চুরির পাশে নিগারের এটি চতুর্থ ফিফটি। তবে টেস্ট প্রথাগত বড় দলের বিপক্ষে এটিই তার প্রথম ফিফটি। ২০ ওভারের বিশ্বকাপেও পঞ্চাশের দেখা পেলেন তিনি প্রথমবার। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজের সহজাত ব্যাটিংয়েই সাফল্য এসেছে, বললেন নিগার।

“অস্ট্রেলিয়া ভেবে আমি ব্যাটিং করছিলাম না। স্রেফ বল দেখছিলাম এবং ওই মুহূর্তে যা খেলার দরকার ছিল, তা চেষ্টা করছিলাম। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আমার সবকিছু প্রক্রিয়া অুনসরণ করার চেষ্টা করেছি। পাওয়ার প্লেতে একটু আক্রমণাত্মক খেলেছি। পরে একটু ধীরে খেলেছি যে ইনিংস লম্বা করতে পারি। নিজের চিন্তা থেকেই করেছি, যেহেতু লম্বা খেলতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে। নিজের ছন্দেই খেলার চেষ্টা করেছি।”

নিগারের ব্যাটিং ছাড়া এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের আর একমাত্র প্রাপ্তি হয়তো মারুফা আক্তারের বোলিং। আগের ম্যাচে সুইং বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে নাড়িয়ে দিয়ে ৩ উইকেট শিকারি পেসার এই ম্যাচেও দারুণ বোলিং করেন। বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজন বেথ মুনিকে আউট করেন তিনি শুরুতে। ৪ ওভারে রান দেন মাত্র ১৯।

অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলমকে বাদ দিয়ে এ দিন মূল পেসার হিসেবেই খেলানো হয় মারুফাকে। ১৮ বছর বয়সী পেসারের এই ছুটে চলায় উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অধিনায়ক।

“দিন দিন সে পরিণত হয়ে উঠছে এবং বিশ্বমানের ব্যাটারদের সামনে যেভাবে সে বোলিং করেছে, তা অসাধারণ। সে এখন নিজের বোলিং নিয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমি যখনই তাকে বোলিংয়ে আনি, তাকে স্রেফ বলি নিজের মতো বোলিং করতে। সে খুবই তরুণ, প্রাণশক্তিতে ভরপুর। চেষ্টা করছে নিজের সেরাটা দেওয়ার।”

বাংলাদেশের পরের ম্যাচ শুক্রবার, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে কেপ টাউনে।