টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙ্গা করার কৌশল

করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বাজারে প্রয়োজনীয় টাকার প্রবাহ বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। কমানো হয়েছে রেপোর সুদহার ও ব্যাংক রেট। তবে বাজারে অর্থের জোগান বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায় সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা সংকুলানমুখী করার কথাও বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বুধবার নতুন এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। এবার মহামারি করোনার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হবে চলমান করোনাভাইরাসজনিত মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা এবং সরকার থেকে নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে আর্থিক খাতের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা। যার মূল কাজ হবে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।

মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি ভঙ্গির কারণে নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯.৩ শতাংশ, যা গত মুদ্রানীতির চেয়ে ৩.৪ শতাংশ বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়ছে বেশ মন্থর গতিতে। এ কারণে নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য আগের মতোই ১৪.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে এটি গত মুদ্রানীতিতে অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬.১৯ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলমান করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং সরকার থেকে নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন বিনিয়োগ জোরদারকরণে বেসরকারি খাতে ১৪.৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি পর্যাপ্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেকটা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪৪.৪ শতাংশ। গত মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২৪.৩ শতাংশ। তবে সরকারের ঋণ বাড়তে থাকায় জানুয়ারিতে সরকারি ঋণের এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল ৩৭.৭ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ঋণ নিতে বাধ্য হয় সরকার। এতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৫৩.৩ শতাংশ। তাই মুদ্রানীতিতেও সরকারকে প্রয়োজনীয় ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রার জোগান বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১৫.৬ শতাংশ। এটি গত মুদ্রানীতির চেয়ে ২.৬ শতাংশ বেশি। গত মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২.৫০ শতাংশ। তবে জানুয়ারিতে সংশোধন করে এই লক্ষ্য বাড়িয়ে ধরা হয় ১৩ শতাংশ। অর্থবছর শেষে এর বিপরীতে অর্জন হয়েছে ১২.৬৬ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১৩.৫ শতাংশ। গত মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য ছিল ১২.৫ শতাংশ। এর বিপরীতে গত অর্থবছরে রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি হয়েছে রেকর্ড ১৫.৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, করোনার কারণে এখন যে হারে রিজার্ভ মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো হবে, সেটি তিন-চার মাস পর একই হারে বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। কারণ এরই মধ্যে যেটি বেড়েছে সেটি মানি মাল্টিপ্লেয়ার হয়ে অনেক বেশি ব্যাপক মুদ্রা তৈরি করবে। কাজেই ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি সামনে বাড়বেই। এ জন্য ব্যাপক মুদ্রার লক্ষ্য বেশি বাড়িয়ে ধরা হয়েছে।

বাজারে কম খরচে অর্থের জোগান বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার রেপো রেট কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মুদ্রানীতিতে রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। কমানো হয়েছে রিভার্স রেপোর সুদহারও। এ ক্ষেত্রে সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ঘোষিত সুদহার যৌক্তিকীকরণ নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় ১৭ বছর ব্যাংক রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে ৪ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ