জয়পুরহাটে বেতনহীন চাকরি করছেন ৫টি প্রতিষ্ঠানের ৪২ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:

জয়পুরহাটের কালাইয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর বিনাবেতনে চাকরী করছেন। বেতন ভাতা না পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করালেও মাস শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। উপজেলার ১টি কলেজ, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা-বেতনে শিক্ষার্থী পড়াচ্ছেন। শিক্ষক-কর্মচারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির নিকট থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় তাঁরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। অথচ বেশীরভাগ শিক্ষক কর্মচারীই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটিকে মোটা অংকের টাকা ডোনেশন দিয়ে চাকরী নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজ পর্যায়ে উপজেলার মাত্রাই মডেল কলেজের ২০ জন, মাধ্যমিক পর্যায়ে আওঁড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও মোলামগাড়িহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন এবং নি¤œ মাধ্যমিক পর্যায়ে রাঘবপুর নি¤œ মাধ্যমিক ও দীঘিরহাট নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রায় ১৮ বছর ধরে বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

মাত্রাই মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একজন দিনমজুরও দিনে অন্তত তিন’শ টাকা মজুরি পায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আমরা বছরের পর বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষার্থী পড়াচ্ছি; আর মাস শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরছি’। বেতন পাই না, একথা বলতেও লজ্জা লাগে।

আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পর্যায়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা সুলতানা বলেন, ‘৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি গত ২০০১ সালে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সব শর্ত পূরুণ করার পরও বিগত জোট সরকারের আমলে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করা হয়নি। আবার বর্তমান সরকারের আমলে কয়েক’শ প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করা হলেও আমাদের প্রতিষ্ঠান করা হয়নি। ফলে ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন’। এই বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভূক্তি হতে আর কত সময় লাগবে কে জানে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের ব্যাপারে এ কার্যালয়ের কোনো হাত নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়’।
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকরা জাতির বিবেক। কিন্তু সেই শিক্ষকরা যদি বছরের পর বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষার্থী পড়ান এবং পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটান তবে এর চেয়ে দুঃখ আর লজ্জা পাওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েও কেন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে’।

জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন,‘সরকারী নীতিমালা অনুসরণ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শর্ত পূরুণ করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপন করা হয়েছে। যে কোনো কারণেই হোক, শিক্ষকদের দায়ী করে তাঁদের এমপিওভুক্তি আটকিয়ে দেওয়া সমীচীন নয়। কারণ তারা যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বেতনের আশায় চাকরিতে যোগদান করেছেন। তাদের এমপিওভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে’।

স/শা