জয়পুরহাটে বাস উল্টে আটজন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:
জয়পুরহাটে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলে ৩ শিশুসহ ৫ নারীর মৃত্যু হয় গতকাল শুক্রবার দুপুরে। এছাড়া এসময় ৩২ জন আহত হন।  এ দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। রাতেই মরদেহগুলো পরিবারের লোকজনদের নিকট হস্তান্তর করার সময় প্রত্যকের পরিবারকে তাৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ হাজার ও পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আবার আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ।

এদিকে শনিবার সকালে অজ্ঞাত নিহত দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের মরদেহ পরিবারের লোকজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফিটনেসবিহীন এমপি বাসের (ঢাকা মেট্রো-জ-০৪-০৩৫০) এর মালিক, চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। ওই ঘটনায় এখনও এলাকায় শোকের ছায়া বইছে। জেলার সর্বত্রই চলছে একই আলাপ।

জানা গেছে, এ দুর্ঘটনার মূল রহস্য উৎঘাটন করতে এবং কারণ জানতে শুক্রবার রাতেই জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সোনিয়া বিনতে তাবিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন। তাদেরকে ওই ঘটনা দ্রুত তদন্তপূর্বক কারণ উল্লেখ করে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে তা দাখিল করতে নির্দেশ দেন তিনি। সে অনুযায়ী ওই কমিটি শনিবার সকাল থেকে তাদের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। নিহতদের লাশ পরিবারের লোকজনদের নিকট হস্তান্তরের সময় তাৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে ৬ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ৬ হাজার টাকা করে দিয়েছেন ওই পরিবারের লোকজনদের হাতে।

জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. যোবায়ের হোসেন গালিব বলেন, এ দুর্ঘটনায় সকল আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভারের দায়িত্ব নিয়েছে জেলা আধুনিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ।

এদিকে শনিবার সকালে অজ্ঞাত নিহত দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা ছিল মা-ছেলে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর হারুনুর রশিদের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৪৫) এবং পাঁচ বছর বয়সের ছেলে সন্তান শিহাব। তাদের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় পরের দিন জয়পুরহাট সদর থানার পুলিশ বাদী হয়ে বাসের মালিক রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের ছাইফুল ইসলামের স্ত্রী রাহেলা বেগম, বাসের চালক জয়পুরহাট শহরের বিশ্বাসপাড়া মহল্লার সিরাজের ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া, সুপারভাইজার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ধামাহার গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে মতিয়ার রহমান এবং হেলপার অজ্ঞাত ঠিকানায় আরমান আলীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে তারা সবাই পলাতক আছেন। ওই ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হাসপাতালে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

জয়পুরহাট সদর থানার ওসি (তদন্ত) মুমিনুল হক বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির ফিটনেস মেয়াদ উর্ত্তীণ ও রুট পারমিট ছিল না। তাই বাসের মালিক, ড্রাইভার, সুপার ভাইজার ও হেলপারের নামে মামলা হয়েছে এবং তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আর আমি আহতদের সাথে কথা বলে যা জানতে পারছি, তা হলো চালকের কারণেই মুলত ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেপরোয়া এবং দ্রুত গতিতে বাসটি চালানোর কারণেই একসাথে এতগুলো মানুষকে প্রাণ দিতে হলো। বাসের ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপার এখনও পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

স/শা