জয়পুরহাটে পোল্ট্রির বাজারে ধ্বস, মাইকিং করে বিক্রি হচ্ছে মুরগি

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:

জয়পুরহাটের কালাইয়ে গত দু’সপ্তাহ থেকে অস্বাভাবিকহারে দাম কমে যাওয়ায় মাইকিং করে বিক্রি করা হচ্ছে পোলট্রি মুরগি। উপজেলার প্রতিটি বাজারে কম দামে এসব পোলট্রি মুরগি বিক্রির জন্য মাইকিং করা হলেও ক্রেতাদের সাড়া না পাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে খুচরা বিক্রেতারাও। অন্যদিকে মোটা অংকের লোকসানে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত ১৩৭টি মুরগির খামার ছাড়াও ছোট-বড় আরও ৬’শ খামার রয়েছে। বর্তমানে মুরগি ও ডিমের দাম কমে যাওয়ায় সকল খামারিদের মোটা অংকের লোকশান গুণতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ উপজেলার প্রায় ৪’শ খামার বন্ধ হয়েছে। আগামীতে আরও সম্ভাবনা আছে।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকার বেশ কয়েকজন খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক সময় মুরগির দাম উঠা-নামা করে। সে ক্ষেত্রে কম-বেশী লাভ-লোকশান দুটোই হয়। কিন্তু বর্তমানে যে হারে খামারিদের লোকশান গুণতে হচ্ছে তা গত এক যুগেও হয়নি। যে কোনো কারণেই হোক, খামারি মালিকরা এবার মোটা অংকের লোকসানে পড়েছে।

কালাই দৈনিক পৌর কাঁচা বাজারে খুচরা বিক্রেতা তানভির হোসেন বলেন, খামারিদের নিকট থেকে যে দামে মুরগি কিনি, তার চেয়ে কেজি প্রতি ১০/১২ টাকা লাভে বিক্রি করি। দাম কম হওয়ায় কয়েক দিন আগে লাভের আশায় একটু বেশী মুরগি কিনেছি। কিন্তু বর্তমান পাইকারি বাজারে মুরগির দাম আরও কমে গেছে। ধরে রাখলে মোটা অংকের লোকশান হবে। বাধ্য হয়ে এলাকায় মাইকিং করছি। ৬/৭ কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে, আর ১/২ কেজি ওজনের বিক্রি করছি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। তবু লোকশান হবে অনেক টাকা। লাভের আশায় মুরগি কিনে বেকায়দায় পড়েছি।

পাইকারি বাজারে মুরগি বিক্রি করতে না পেরে উপজেলার মোলামগাড়ীহাটের ২ জন খামারি তাদের সাদা জাতের ব্রয়লার মুরগি বিক্রির জন্য গত কয়েক দিন ধরে এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেরাই মাইকিং করছেন। তারা ২ কেজি ওজনের মুরগি সাথে নিয়ে প্রতি কেজি মুরগি ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য প্রচার করছেন। তবুও ক্রেতা মিলছে না। গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২টি করে মুরগি বিক্রি হচ্ছে তাদের। লোকশান গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের।

এদিকে পুনট বাজারে একই কৌশল অবলম্বন করে মুরগি বিক্রি করছেন খামারি হবিবর রহমান, আনিছুর রহমান, লিয়াকত হোসেন ও মইদুল ইসলাম। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্রয়লার জাতের এক কেজি ওজনের মুরগি উৎপাদন করতে সবমিলে খরচ হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। আর তা বর্তমানে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ টাকায়। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ৪৫ টাকা। বর্তমানে বিক্রি অনুযায়ী হবিবরের ২ কেজি ওজনের সাড়ে ৭’শ পিচ মুরগিতে লোকসান হবে প্রায় ৬৭ হাজার টাকা। আরেক জন খামারি মইদুল ইসলামের ১ হাজার ব্রয়লার মুরগিতে লোকসান হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা।

কালাই পৌর শহরের ফ্রেন্ডস পোলট্রি ফার্মের প্রোপাইটার সামিউল ইসলাম বলেন, ব্রয়লার জাতের ১২০০টি মুরগি ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয়েছে।

মাইকিং করে মুরগি বিক্রির কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারী সার্জন ডা. আব্দুল মালেক বলেন, মুরগি ও ডিমের দাম কমে যাওয়ার পিছনে প্রধান কারণ, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছের আমদানি হচ্ছে। দামও কম পাচ্ছে। আর সে কারণেই বাজারে ক্রেতার সমাগম কমে গেছে। সবমিলিয়ে খামারিরা মুরগি বিক্রি করে বর্তমানে লোকসান গুনছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এক সময় পোলট্রি শিল্প বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

স/শা