জয়পুরহাটে চেয়ারম্যান আজাদ হত্যা: বিচার দেখে যেতে চান নিহতের মা

শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট

চোখের পানি সুখে গেলেও বুকের কান্না এখনো থামেনি সন্তান হারা মায়ের। আর তাই রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে ফিরেন প্রিয় সন্তানকে। কখনো কখনো মনে শান্তনা খোঁজেন যদি সন্তান হত্যার বিচারটা দেখে যেতে পারতেন কিন্তু দীর্ঘ দিনে বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ নিহতের মা সাহারা খাতুন।

জয়পুরহাটের চাঞ্চল্যকর ভাদসা ইউপির চেয়ারম্যান একে আজাদ হত্যার এক বছর পার হলেও এখনো ধরা পড়েনি সব আসামী, পুলিশের গড়িমশির কারনেই বিচার বিলম্বিত হচ্ছে বলে হতাশ নিহতের পরিবার, আতংকিত নতুন চেয়ারম্যানের জীবন নিয়েও।

নিহত চেয়ারম্যানের বড় ভাই আঃ হাই মুকুল মাস্টার এই প্রতিবেদককে জানান, স্থানীয় অপরাজনীতির কারনেইে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। তার ভাইয়ের মৃত্যুর সাথে জড়িত ধরাপড়া আসামীরা জবানবন্দীতে হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী নিহত চেয়ারম্যানের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হাতেম আলীর নাম বলেছে। মামলার মুল আসামী মুন্না পারভেজ ও ঢাকায় র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর পরিকল্পনাকারী হাতেম আলীর নাম বলেছে, হাতেম আলী তাদের ২ লাখ টাকাও দিয়েছিল হত্যার জন্য। র‌্যাবের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছে কিন্তু তারপরেও হাতেম আলীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। উপরন্ত সে বহাল তবিয়তে রাজনীতি করছে। এছাড়াও অন্য আসামী হাকিম, সৈকতরা জামিনে মুক্ত হওয়ায় তাদের পরিবার এখন হুমকির মুখে।

এদিকে ভাদসা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও নিহতের ছোট ভাই সরোয়ার হোসেন স্বাধীন জানান ভাইয়ের স্বপ্ন পুরুনের জন্য তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন কিন্তু বিচার না পাওয়ায় তার জীবন নিয়েও শংকায় তিনি।

মামলার বাদী নিহতের ভাই এনামুল হক কাস্মির অভিযোগ করে বলেন, মামলার সময় তাকে কিছু বুঝতে দেওয়া হয়নি পুলিশ মামলা লিখে তার কাছ থেকে শুধু টিপ সই নিয়েছে। তিনি বলেন তাদের সুযোগ দেওয়া হলে আরো কয়েকজনকে আসামী করা হত। পুলিশ মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কৌশল করেছে।

সেদিন চেয়ারম্যান হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী প্রতিবেশি নয়ন জানান, চেয়ারম্যান হত্যার খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন তিনি । তাকেও গুলি করে দুর্বত্তরা। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর পুলিশকে তিনি সব খবর দিয়েছিলেন এবং জড়িতদের নামও বলেছিলেন তিনি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তিনিও এখন তার জীবন নিয়ে শংকায় আছেন।

পুলিশের গড়িমশির বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ রশিদুল হাসান জানান, মামলাটি চাঞ্চল্যকর। এখানে বড় ধরনের কোন হাত জড়িত আছে কিনা সে কারনে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। সিআইডি’র তদন্তে মুল ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে সেজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে তিনি বলেন যারাই এর সাথে জড়িত থাকনা কেন তারা ধরা পড়বে।

চেয়ারম্যান হত্যার বিচারের দাবীতে তার পরিবার প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে গেছেন এবং সংবাদ সন্মেলনও করেছিলেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় এবং টিভিতে রির্পোট ও প্রকাশিত হয়েছে অনেকবার কিন্তু রহস্যজনকভাবে বিষয়টি চাপা পড়েছে বারবার।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মামলাটি দীর্ঘদিন পুলিশের তদন্তে থাকার পর গত মাসে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এবং মামলার স্বার্থে সিআইডি কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিঘ্রই একটা ভাল ফলাফল পাবেন তারা।

দীর্ঘদিনে মামলার বিচার কাজ শুরু না হওয়ায় এবং আসামীরা সব ধরা না পড়ায় নিহতের পরিবার এখন শংকায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের দাবী হত্যাকান্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আবারো কোন প্রান নাশের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা।

ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভাদসা ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন একে আজাদ কিন্তু চেয়ারে বসার আগেই গত বছরের ৪জুন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি ও ছুরিকাকাত করে আহত করে ঢাকার কয়েকটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১২জুন তার মুর্র্ত্যু ঘটে।

প্রিয় চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনা মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় জনগন, তারাও এ হত্যকান্ডের বিচার দাবীতে মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ করে আসছে। স্থানীয়দের দাবী এ দেশে মন্ত্রী এমপিরাও অন্যায় করে পার পায়নি তাদের ও বিচার হয়েছে কিন্তু এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার হচ্ছেনা তাদের খুটির জোড়টা কোথায়। তাদের মনে প্রশ্ন একটায় তাহলে কি এখানে রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরা জড়িত?

স/অ