জয়পুরহাটে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোই এখন গ্রামীন জনপদের ভরসা

শফিকুল ইসলাম,জয়পুরহাট:
জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকট থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোই গ্রামীন জনপদের ভরসা। ভাল মানের সেবা আর বিনামুল্যে ঔষধ পাওয়ায় গ্রামীন জনপদের আস্থা অর্জন করেছে জয়পুরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, শিশু স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রসুতি সেবা, টিকাসহ সব ধরনের সেবাই মিলছে এসব ক্লিনিকে আর তাই সাধারন রোগীদের ভরসা এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো।

সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতাল সহ ৫ টি উপজেলায় ১৪১ জন চিকিৎসক থাকার কথা কাকলেও আছে মাত্র ৬৪ জন চিকিৎসক আছে । ৭৭ জন চিকিৎসক সংকট নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে জয়পুরহাট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে জেলা সদর উপজেলার পরিবার-পরিকল্পনা ও প্রসূতিদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র মাতৃ মঙ্গলে ১১ জন, পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন, কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন, ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন, আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন এবং জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ১৪ জন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সামনে রোগীদের ভীর। সাড়িবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করছেন গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা। এ চিত্রই বলে দেয় প্রতিনিয়ত গ্রামীন জনপদের সাধারন রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আস্থা অর্জন করেছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। রোগ নির্ণয়ের কোন ব্যবস্থা না থাকলেও রোগীদের মুখে রোগের বর্ণনা শুনে স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ প্রাথমিক চিকিৎসার ঔষধ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা আর তাতে কাজও হচ্ছে অনেকটা। বিনামুল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর ঔষধ পাওয়ায় এসব ক্লিনিকই এখন ভরসা গরিব অসহায় মানুষদের।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, ক্লিনিকের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়েও শিশু নিবন্ধন, প্রস্যুতি নিবন্ধনসহ পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। আর এসব কারনে দিনদিন রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে । জয়পুরহাট জেলার ১৩ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে জেলার ১১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক কাজ করে যাচ্ছে। এখানকার দুস্থ অসহায় রোগিদের কাছে তাদের চিকিৎসাসেবা পৌঁছে যাওয়ায় তারা খুব খুশি। জেলার প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বছরে প্রায় ৪০ হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে , কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতোক ইউনিয়নে একজন করে দানশীল ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ৫ শতক জমি দান করেন। ওই দানকৃত জমির ওপর সরকারি ভাবে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে ব্যায়ে ক্লিনিক নির্মান করা হয়। প্রত্যেকটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য ১৩ থেকে ১৭ জনের কমিউনিটি গ্রুপ ও ৫১ জনের সাপোর্ট গ্রুপ নামে দুইটি গ্রুপ রয়েছে, পদাধিকার বলে গ্রুপ দুটির সভাপতি হলেন এলাকার ইউপি সদস্য এবং জমিদাতা ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির আজীবন সদস্য ।

 


জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল কমিনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা শ্যামপুর গ্রামের শেফালী বেগম, আলেয়া খাতুন ও মহির উদ্দিন জানান, তাদের হাতের কাছে চিকিৎসা সেবা পেয়ে তারা খুব খুশি।বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের যে সেবা দেয়া হয় তাতে গরীব মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে।তারা বিভিন্ন রোগে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বিনামূল্যে ওষুধও পাচ্ছেন।এটি তাদের জন্য ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন তারা। ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্য উজ্জল হোসেন জানান , তিন হাজারেরও বেশী রোগির জন্য ক্লিনিকে দুই মাসের ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনেক সময় রোগির চাপে দেড় মাসেই ওষুধ শেষ হয়ে যায়, তাই ওষুধের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুল আহসান তালুকদার রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে অসহায় দরিদ্র রোগিদের দোরগড়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক সংকট থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ভাল সেবা দেওয়া হচ্ছে আর সে কারনেই গ্রামীন দরিদ্র মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে জয়পুরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভাল অবস্থানে রয়েছে।

জেলায় ১১২টি কমিউিনিটি ক্লিনিকের মধ্যে চালু রয়েছে ১০২টি, অবশিষ্ট ১০টিতেও জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালুর চেষ্টা চলছে।

স/অ