জুড়ীর ‘গরিবের হাসপাতাল’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গর্ভবতী মায়েদের চিন্তা একটাই—স্বাভাবিক প্রসব হবে তো? নাকি সেই কাটাছেঁড়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে? দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের এই দুশ্চিন্তা থাকে বেশি। প্রথমত, স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব ঘটানোয় স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, অস্ত্রোপচার ব্যয়সাপেক্ষ।

এখন উপজেলা পর্যায়েও ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক। অল্প কিছু ছাড়া বাদবাকি প্রায় সবগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেখানে না আছে ভালো সার্জন, না আছে মানসম্মত অস্ত্রোপচারকক্ষ। অথচ এসব ক্লিনিকের আয়ের মূল উৎসই হলো অস্ত্রোপচারভিত্তিক প্রসব। যে মায়ের স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব ছিল, স্রেফ টাকার জন্য তাঁকেও অস্ত্রোপচারের টেবিলে নেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক প্রসব নিয়ে চিন্তায় পড়াটা স্বাভাবিক।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ও এর আশপাশের এলাকার গর্ভবতী মায়েদের এই দুশ্চিন্তা অনেকখানি লাঘব করেছে ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক। জুড়ী উপজেলার ‘গরিবের হাসপাতাল’ খ্যাত এই ক্লিনিকটি এখন তাঁদের পরম আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে। কারণ, এই ক্লিনিকটিতে সুদক্ষ প্রসবকর্মীদের সহায়তায় স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে। গত সোমবার ক্লিনিকটিতে ৫০০তম শিশুর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এই প্রসবসেবা দেওয়ার বদলে ক্লিনিকটিকে কোনো টাকাপয়সা দিতে হয় না। সবচেয়ে আনন্দের কথা হলো, ২০১২ সাল থেকে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম শুরু করার পর এখন পর্যন্ত সেখানে একজন মা কিংবা নবজাতকের মৃত্যু ঘটেনি। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ’ কমিউনিটি ক্লিনিক হিসেবে এটিকে পুরস্কৃত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রত্যন্ত এলাকার এই ক্লিনিকটি জাতীয় বিবেকের সামনে বিরাট দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় মায়েদের প্রাথমিক দুশ্চিন্তা ও ভয় কাটিয়ে দিতে পেরেছে তারা। আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত অবস্থানে থাকার পরও তাদের এই সাফল্য দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে হয়। প্রতিটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, তারা স্বাভাবিক প্রসবের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। অস্ত্রোপচার ছাড়া কোনো পথ নেই—এমন অবস্থা তৈরি হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিককে মডেল হিসেবে নিয়ে সারা দেশে যদি এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়, তাহলে সেটি বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্য অবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। সুস্থ প্রজনন স্বাস্থ্য ও সুস্থ প্রসবের মধ্য দিয়ে সুস্থ নবজাতকের জন্ম হবে। সেই সুস্থ প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নেবে নতুন উচ্চতায়।