জিয়াউর রহমান কখনো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য দেননি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কোনো অশালীন বা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেননি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘হত্যার পর শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র হনন করতে চেয়েছেন জিয়া -মর্মে গতকাল প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী নেতারাই ক্ষমতায় বসেছিলেন, আওয়ামী নেতারাই সংসদেও ছিলেন। কিন্তু তখন শেখ হাসিনা দেশে আসতে পারেননি। কিন্তু শহীদ জিয়ার আগ্রহ ও সম্মতিতেই তিনি ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছেন এবং অবিলম্বে তাঁকে তাঁদের পরিবারের বাড়িঘর ও সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শহীদ জিয়া কখনো শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কোনো অশালীন কিংবা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন-এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বরঞ্চ আজ যারা সরকারের মন্ত্রী তাদের অনেকেই শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা কটূক্তি করেছেন এবং তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ৭৫-এর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আছে। কাজেই শহীদ জিয়া শেখ মুজিবের চরিত্র হনন করেছেন এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বরং শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতারা ক্রমাগত মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ করে  শহীদ জিয়ার চরিত্র হননের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলছেন- জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপির সখ্যতা আছে। তাঁরা বলছেন, বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জঙ্গিদের সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে। আওয়ামী লীগ নেতারা আরো বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন উগ্রবাদ দমনে জঙ্গিদের হত্যা করছে তখন বিএনপি মায়াকান্না করছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে জঙ্গিবাদের উৎস বের করা হোক। জঙ্গিদের হত্যা করার ফলে তাদের শিকড় সন্ধান করা দুরূহ হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। শুধু বিএনপিই নয়, দেশবাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে জঙ্গি নির্মূলে সরকারের আন্তরিকতা নেই, যদি থাকত তাহলে জঙ্গিদের হত্যা না করে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে উগ্রবাদের নাটের গুরুদের হদিস বের করতে সচেষ্ট হতেন। মূলত জঙ্গিবাদ দমনের পরিবর্তে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দলগুলোকে অভিযুক্ত করতেই সরকার ও আওয়ামী নেতাদের অতি আগ্রহের কারণেই জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ আরো শক্তিশালী ও বেপরোয়া হতে পেরেছে। এ সব থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিএনপি নয় বরং ক্ষমতাসীনরাই কৌশলে উগ্রবাদীদের নির্বিঘ্নে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিরোধীদলের ওপরই অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি দমন নীতি প্রয়োগ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনের নামে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েক দিনে বিএনপির প্রায় ২৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এবং ক্রসফায়ারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- নিষ্ঠুর ও বর্বর উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে নির্মূল এবং তাদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হলে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আর এই জরুরি কাজটি সরকারকেই করতে হবে। আর তা না করে সরকার যদি এই মানবতাবিরোধী উগ্রবাদীদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের খেলা খেলতে থাকেন, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।’

নজরুল বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে ব্যর্থতা এবং একের পর এক উগ্রবাদীদের নৃশংস হামলায় দেশি-বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। তারা বাংলাদেশে বসবাস ও ভ্রমণে এখন ভীত সন্ত্রস্ত। বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করছেন এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশি কূটনীকিদের পরিবারকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর তথ্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সভা-সমাবেশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের বাংলাদেশ ভ্রমণ একের পর এক বাতিল কিংবা স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত। রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতি অবসানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বান অনুযায়ী জাতীয় ঐক্য গড়ে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।’

এ ছাড়া রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদে বের করা মিছিলে হামলার নিন্দাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

সূত্র: এনটিভি