জিলাপীর প্যাঁচেই ৩০ বছরের জীবন মিলনের

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, নাটোর (বাগাতিপাড়া) প্রতিনিধি:
সুস্বাদু খাবারের আরেক নাম জিলাপী। বাংলা প্রবাদে জিলাপীর প্যাঁচের বর্ণনা রয়েছে খারাপ অর্থে। কিন্তু সেই জিলাপী বিক্রি করেই চলছে মিলনদের সংসার। তিন পুরুষ ধরে বিক্রি করছে তারা এ জিলাপী। বাপ-দাদার এ পেশায় স্বাচ্ছন্দ্যও বোধ করে মিলন। উপজেলার বেগুনিয়া গ্রামের মৃত তারাপদ দাসের ছেলে সে। বাবাও সংসার চালিয়েছেন জিলাপী বিক্রি করে। প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে দাদা পূরী লাল দাস প্রথম এ ব্যবসা শুরু করেছিলেন।

মিলন জানান, অভাবের সংসার টিকিয়ে রাখতে বাবা-দাদার পেশাকেই বেছে নেন তিনি। চৌদ্দ বছর বয়সে গ্রামে-গ্রামে জিলাপী ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রায় ৩০ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন এ পেশা। বিশেষ কায়দায় ময়দা মাখিয়ে তেলে ভেজে চিনি গুলানো রসে ভিজিয়ে তৈরি করেন জিলাপী। আর হাতের কায়দায় বিশেষ স্বাদ তৈরি হয় মিলনের আড়াই প্যাঁচের জিলাপী।

বাজারের হাটবারে কাঠ খড়ির চুলা জ্বালিয়ে জনসম্মুখেই বানান এ খাবার। মিলনের জিলাপীর এখন ব্যাপক চাহিদা। অনেক সময় লাইন ধরেও ক্রেতাদের কিনতে হয় তার এ সুস্বাদু জিলাপী। এখন আর গ্রামে গ্রামে ফেরি করে তাকে বিক্রি করতে হয়না। উপজেলার মালঞ্চি, তমালতলা, জিগরী বাজারের প্রতিহাটবারে সপ্তাহে দুই দিন করে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে চালাচ্ছেন এ ব্যবসা।

মিলন আরো জানান, জিলাপী বিক্রি করে প্রতি হাটবারে তার আয় হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। খরচ বাদে চার থেকে পাঁচশ টাকা লাভ হয়। তবে বাজারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় বর্তমানে লাভ কম হচ্ছে বলে জানান তিনি। সপ্তাহে ৬ দিন তিনি জিলাপী বিক্রি করেন। এ জিলাপী বিক্রির টাকা যুগিয়ে দুটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। অপর ছেলে অচিন্ত্য কারিগরি শাখায় দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে। এখন স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার তার। তিনিই প্রমাণ করেছেন জিলাপী বিক্রি করেও স্বাচ্ছন্দ্যভাবে জীবন-যাপন করা যায়।

মালঞ্চি বাজারে জিলাপী ক্রেতা আঃ হামিদ মিয়া (৬৫) জানান, ৩০ বছর ধরে মিলনকে জিলাপী বিক্রি করতে তিনি দেখছেন। প্রতি হাটবারে বাড়ির নাতি-নাতনিসহ অন্যদের জন্য মিলনের জিলাপী কেনেন তিনি।
স/আ