জিপিএ ৫ পেয়েও সুযোগ পাবে না এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী

এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আসন রয়েছে মাত্র ৬১ হাজার। এ অবস্থায় জিপিএ ৫ পেয়েও এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাবেন না।

শিক্ষার্থীদের সামনে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল শিক্ষা ও মেডিক্যালে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ করে নেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে উচ্চশিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস) ও সমমান কোর্সে ১৩ লাখ ১৭ হাজারের মতো আসন রয়েছে। আর এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ উচ্চশিক্ষায় আসে না। সেই হিসাবে আসনের কোনো সংকট নেই। বরং চার লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। তবে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে যুদ্ধে নামতে হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘যারা জিপিএ ৫ পেয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তারা ও তাদের পরিবার আশা করছে, তারা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে। কিন্তু ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা সীমিত। ফলে অনেকেরই ভর্তির সুযোগ হবে না। তখন তাদের হতাশ ও মন খারাপের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। জিপিএ ৫-এর বাইরেও আরো অনেক শিক্ষার্থী আছে। প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এই জায়গায় সরকারকে আরো পরিকল্পনা করতে হবে। ’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫২। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবেমাত্র আইন প্রণয়ন হয়েছে। আর খুলনা শেখ হাসিনা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ও কিশোরগঞ্জ শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুরুতে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ জন করে ১৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। চারটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর সমমানের শিক্ষা দেওয়া হয়। ফলে বাকি ৩৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।

সরকারি ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর প্রায় ৫৫ হাজার আসন ছিল। আগামী শিক্ষাবর্ষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৩৯৬টিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসন কমেছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৫০০। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরেই মূলত শিক্ষার্থীদের আগ্রহ।

বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় হাজার ৮৫, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চার হাজার ৯২৬, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার হাজার ৬৯৩, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই হাজার ১৩৩, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই হাজার ৭৫৬ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ২১৫টি আসন রয়েছে।

এ ছাড়া ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ১০০টিতে আসন প্রায় দুই লাখ পাঁচ হাজার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে আট লাখ ৭২ হাজার ৮১৫, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাদরাসায় ৬০ হাজার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে ৭৭ হাজার ৭৫৬, দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০, চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি-বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার ৬০০, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড এরোনটিক্যাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন রয়েছে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘চলতি বছর উচ্চশিক্ষায় আসনের ক্ষেত্রে কোনো সংকট হবে না। তবে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পছন্দের কোর্সের ক্ষেত্রে সংকটে পড়তে হবে। আমাদের উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ আসনই অধিভুক্ত কলেজে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। আমরা যদি এসব কলেজের মান বাড়াতে পারি, তাহলে অনেক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায়ই সেখানে ভর্তি হবে। ’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতিবছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসনসংখ্যা বাড়লেও এবার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন কমেছে। শিক্ষার্থীরা প্রকৌশল ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হলেও সেখানে খুব বেশি আসন নেই। মানসম্মত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও হাতে গোনা। এ ছাড়া এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও প্রায় ছয় লাখ। তাঁদের অনেকেই জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ফলে পছন্দের আসন নিয়ে তুমুল যুদ্ধে নামতে হবে শিক্ষার্থীদের।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ