জাবি অধ্যাপককে হেয়প্রতিপন্ন, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর তমালের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাংশ। সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫০ ব্যাচ) শিক্ষার্থী শিমুল বিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী। তমাল স্যারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা তমাল স্যারকে যতটুকু চিনি, তিনি ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। অভিযোগকারী স্যারকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে এই অভিযোগ করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা স্যারের পাশে আছি। ‘

একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (৪৮ ব্যাচ) শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ইমু বলেন, ‘স্যারের সাথে আমাদের বিগত দুইটা বর্ষে ক্লাস ছিল। স্যারকে আমরা চিনি। তার বিরুদ্ধে যে নিউজ ছাপা হয়েছে, সেটির বক্তব্যের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা বুঝতে পারি যে তা কতটা ভিত্তিহীন। আমরা মনে করি স্যারকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ জানাই। ‘

এর আগে গত রবিবার (১১ ডিসেম্বর) অধ্যাপক তমালের বিরুদ্ধে বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থীর করা মামলার প্রেক্ষিতে একটি অনলাইন পোর্টালে পরকীয়ার অভিযোগ এনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযোগকারী দর্শন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন। তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা নাজমুল মানছুর তমালের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দায়ের করা এ মামলার নম্বর হচ্ছে- ১৯২০/২২।

যেখানে সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন, অধ্যাপক তমাল বিভিন্ন প্রোজেক্টে ভলান্টিয়ারের কাজের মাধ্যমে তার স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন। পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য তার স্ত্রীর সাথে ওই অধ্যাপকের যোগাযোগ বাড়তে থাকে। এরপর অধ্যাপক তমাল বিভাগের সভাপতি থাকাকালে ২০১৯ সালে দর্শন বিভাগের বাৎসরিক বনভোজনের সময় তাদেরকে একসাথে দেখা যায়। সেসময় তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অপরদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘জোর পূর্বক’ শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার মানববন্ধনে উপস্থিত হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। এ ধরনের ঘটনা এবং মানববন্ধনে উপস্থিত হওয়া আমার জন্য বিব্রতকর। কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেই বা কিভাবে? আমার মনে হয় এ ব্যাপারে শিক্ষকদের সতর্ক থাকা উচিত। ‘

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি রাতে গ্রুপে একটা মেসেজ পেলাম যেখানে লেখা ছিল, আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক ম্যাডাম মানববন্ধনে উপস্থিত থাকতে বলছেন। সকালে আবার ম্যাডাম কল দিলেন। তখন মানববন্ধনে উপস্থিত হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। ‘

এ বিষয়ে বিভাগের প্রভাষক সাথী আক্তার বলেন, ‘বিভাগ থেকে কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে যেতে বাধ্য করেছেন বলে আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছোট না যে তাদের বাধ্য করা যায়। ‘

জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানোর অভিযোগের ব্যাপারে দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘মানববন্ধনের বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তারা কী কারণে মানববন্ধন করেছে আমি জানি না। বিভাগের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ‘

সূত্র: কালের কণ্ঠ