জাতীয়করণে বাদ পড়া স্কুলশিক্ষকরা উদ্বিগ্ন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জাতীয়করণের দাবিতে পাঁচ শতাধিক প্রাথমিকের শিক্ষক প্রেসক্লাবের সামনে আছেন টানা ৪২ দিন ধরে। আছে বৃষ্টি, মশা আবার তীব্র গরমও। এক জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে মারা গেছেন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরো আট জন। প্রতিদিনই নানাভাবে অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষকরা। বাড়িতে সন্তানকে রাখার মতো কেউ না থাকায় অনেক নারী শিক্ষক নিজ সন্তানকে নিয়ে আছেন প্রেসক্লাবের সামনে। দাবির আশ্বাস না নিয়ে তারা বাড়ি ফিরতে চান না। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে আছেন তারা।

২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি তিন ধাপে করে সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৯২১, দ্বিতীয় ধাপে ১৭১৯টি বিদ্যালয় এবং তৃতীয় ধাপে ৫৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ হয়। তবে এখনো জাতীয়করণ হয়নি এমন প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৪ হাজার ১৫৯টি। যথা সময়ে মাঠপর্যায় থেকে প্রকৃত তথ্য না দেওয়ায় এসব স্কুল জাতীয়করণ হয়নি বলে অভিযোগ আন্দোলনরত শিক্ষকদের। তৃতীয় ধাপে বাদ পড়া শিক্ষকরা সরকারিকরণের দাবিতে গত বছরের ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেন। তিন জন সচিবের আশ্বাসে ৭ ফেব্রুয়ারি অনশনের ১৮ দিন পর কর্মসূচি স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান তারা। কিন্তু এই সময়েও দাবি পূরণের ক্ষেত্রে কোনো সাড়া পাননি শিক্ষকরা।

প্রাথমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব স্কুল সরকারিকরণের আশায় তৈরি করা হয়েছে। কিছু ২০১৩ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত। একটি বিদ্যালয় সরকারিকরণ করতে হলে ৩৩ শতাংশ জমি ঐ প্রতিষ্ঠানের নামে থাকতে হয়। সরকারি চাকরির আশায় অনেক বিদ্যালয়ের জমি কেনার টাকা শিক্ষকরাই দিয়েছেন। বাদ পড়া প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি মামুনুর রশীদ খোকন বলেন, ‘২০১২ সালের ২৭ মের আগে যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী সেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি হওয়ার যোগ্য হবে। কিন্তু যোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠানই বাদ পড়েছে। এই বিধির আলোকে যে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের উপযুক্ত হয়, সেগুলোকেই জাতীয়করণের দাবি আমাদের। এই সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, আমরা বিধিমালার বাইরে অন্যায্য কিছু দাবি করছি না।’

গত বুধবার এই শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। মন্ত্রী তাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি এসেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পুরোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭ হাজার ৬৭২টি। এছাড়া নতুন সরকারি হওয়া স্কুল ২৫ হাজার ২৪০, বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় নতুন সরকারি স্কুল ৬৩৪টি এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৫৫। সব মিলে স্কুলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০১।