জাজিরা প্রান্তের শেষ স্প্যানটি বসছে আজ

পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যান বসছে আজ বুধবার (১০ জুন)। এটিই জাজিরা প্রান্তের শেষ স্প্যান। এটি বসে গেলে মাওয়া প্রান্তে আর মাত্র ১০টি স্প্যান বসানো বাকি থাকবে। যা ভরা বর্ষায়ও স্প্যানের ওপর বসাতে কষ্ট পেতে হবে না।

তবে ৩১তম স্প্যানটি বসানো জটিল হওয়ায় এটি বুধবারই পিলালের ওপর বসাতে চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কম্পানি।

এসব তথ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, ৩১তম স্প্যানটি আগামী ১১ জুন বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ১১ জুন থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত অবহাওয়া খারাপ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই একদিন আগে আজ বুধবার (১০ জুন) এটি বসানোর পরিকল্পা করা হয়েছে। তাছাড়া নদীতে দিন দিন পানি বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে রাতেও।

স্প্যানটি বসানো হবে জাজিরা প্রান্তের ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের ওপর। এটি জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তের সংযোগস্থল। যেখানে একটি নৌ চ্যানেল দিয়ে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল করে। ওইদিন এ চ্যানেল দিয়ে এসব নৌযান চলাচল করলে স্প্যানটি পিলারের ওপর বসাতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এইসময় নৌযান বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে আজ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট পরিহার করে ঢাকা-পাটুরিয়া-ভাঙ্গা রুট ব্যবহার করার জন্য।

শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডাব্লিউটিসি’র এজিএম মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিআইডাব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যানকে দেওয়া সেতু কর্তৃপক্ষের একটি চিঠির অনুলিপি আমার হস্তগত। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

এদিকে সেতু বিভাগের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আবু নাছের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক ব্যবহারকারী যানবাহনকে বিকল্প রুটে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া দয়েছে। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি চ্যানেল দিয়ে ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলারসহ সব ধরনের জলযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।

মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক সিরাজুল কবির জানান, সকাল ১০টা থেকে ফেরিসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে এ নৌরুটে। ১১টার আগেই এসব নৌযান চলে যাবে গন্তব্যে। ফলে ১১টার পর নৌরুটে আর জলযান চলাচল করবে না। তাই সেতুর কাজের কোনো সমস্যা হবে না।

ভোগান্তি এড়াতে বুধবার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক ব্যবহারকারী যানবাহনকে বিকল্প রুটে (ঢাকা-পাটুরিয়াা-ভাংগা) চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক এবং জলপথ ব্যবহারকারীদের সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সেতু বিভাগ।

এর আগে গত ৩১ মে পদ্মা সেতুর ৩০তম স্প্যান পিলারের ওপর বসানো হয়। স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের ২৬ ও ২৭ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়। এতে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৪৫০০ মিটার বা সাড়ে ৪ কিলোমিটার। আর ৩১তম স্প্যানটি বসে গেলে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে চার হাজার ৬৫০ মিটার। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ ভাগ। নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭১ ভাগ। আর সেতুর সার্বিক কাজের অত্রগতি হয়েছে ৭৯ ভাগ।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি দ্বিতল হবে, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন লোড নিতে সক্ষম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতায় নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ