জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় রাবি শিক্ষার্থীরা : রোধে কঠোর প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বিপথগামী শিক্ষার্থী। এখন পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। আরো কিছু শিক্ষার্থী জড়িত রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবারে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের বিপথে যাওয়া রোধে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন।

 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ, আব্দুল গফ্ফার ও মাহবুব  শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় কারাগারে আছে। অপরজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসিরুল আলম অনিন্দ্য দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ। সেও রেজাউল করিম হত্যার জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 
সূত্র মতে, গত ২৩ এপ্রিল সকালে নগরীর শালবাগান এলাকায় বাড়ির পাশেই ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের দাবি, হত্যায় জঙ্গিরা জড়িত। এ হত্যাকান্ডের পর পুলিশ একই বিভাগের বেশ কয়েকজন ছাত্রকে সন্দেহের তালিকায় রাখে।

 

এর মধ্যে সন্দেহভাজন ছাত্রের নাম শরিফুল ইসলাম এবং অপরজন মুনতাসিরুল আলম অনিন্দ্য। এরইমধ্যে শরিফুল জঙ্গি কানেকশনে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে বলে অনুমান করছে পুলিশ। গত ০২ জুন দিনগত রাতে গোয়েন্দা পুলিশ অনিন্দ্যকে কাদিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাকে তিনদফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই হত্যার ঘটনায় গত ১৩ মে বিশ্ববিদ্যালয় রহমতুল্লাহ এবং ৩০ মে গাফফার ও মাহবুবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, গোয়েন্দা ও পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, শুধু এই চারজন নয়, আরো বেশ কিছু শিক্ষার্থীর জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এরমধ্যে ইংরেজি বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়,  কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম জানান, অনিন্দ্য ও শরিফুলের নেতৃত্বে সাতজনের একটি জঙ্গি গ্রুপ সক্রিয় থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। তারাই মূলত অধ্যাপক রেজাউল হত্যায় জড়িত।

 
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, অধ্যাপক রেজাউল হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া রাবি শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু শিক্ষার্থীর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

বিশ্ববিদ্যায়ের ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি উদ্বেগজনক, সেই সাথে বিষয়টি তলিয়ে দেখার দরকার। একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষককে হত্যা করছে-এটি সামিথিং রং।  শিক্ষার্থীরা নিজেদের মানব বোমায় তৈরি করছে, তারা জানে তাদের নিশ্চিত মৃত্যু হবে, তারপরও সে পথে যাচ্ছে। কারা এগোলো করছে, কীভাবে করছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। জঙ্গি ও শিক্ষক হত্যার যারা জড়িয়ে পড়ছে, শুধু তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলেই হবে না, এর পেছনে কারা আছে তা খুঁজে বের করতে হবে।

 
বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থীর জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আগে থেকে তো তারা আমাদের বলবে না। তারা এগুলো স্টাডি করছেন, যেখানে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমাদের কাছে যেখানে তথ্য দরকার, সেই তথ্যগুলো নিচ্ছেন। তাদের (শিক্ষার্থীদের) বাড়ি ঠিকানাসহ ইত্যাদি তথ্য নিচ্ছেন। এমনি কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 
অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর তালিকা পুলিশের হাতে:
বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় অনুষদের অধীনের বিভিন্ন বিভাগে থেকে ড্রপ আউট হওয়া অর্ধশতের বেশি শিক্ষার্থীর একটি তালিকা পুলিশে কাছে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন জানান, যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে থেকে অনেক জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ত হচ্ছে। এসব ড্রপ আউট শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি অনুষদ থেকে ৭ থেকে ৮জন শিক্ষার্থী এই তালিকায় রয়েছে।

 
জঙ্গি প্রতিরোধে কঠোর রাবি প্রশাসন:
বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে শুক্রবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্র ছাড়া অন্যদের চলাচল সর্তক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, কাজলা, বিনোদপুর ও স্টেশন বাজার গেটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ফটকগুলো দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমআ’র নামাজে পুলিশের নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো।

 
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডীন, বিভাগের সভাপতি, হল প্রোভোস্ট এবং ইনস্টিটিউটের ডীনদের সাথে বৈঠক করবো। ক্লাসে অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের উপর নজরদারি, খেলাধূলা ও সৃজনশীল তাদের কাজে যুক্ত করার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। খেলাধূলা ও সৃজনশীল কাজে শিক্ষার্থীরা কম থাকায় বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

স/অ