জঙ্গিরা ‘ক্যাপটাগন’ খেয়েছিল কি না জানতে ভিসেরা পরীক্ষা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞে জড়িত ব্যক্তিরা ক্যাপটাগন নামের কোনো বিশেষ ওষুধ খেয়েছিল কি না, তা জানার জন্য নিহত ৫ জঙ্গির ভিসেরা পরীক্ষা হবে। এ জন্য নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। একই পরীক্ষার জন্য এফবিআই এবং গুজরাটের একটি প্রতিষ্ঠানও এসব জঙ্গির ভিসেরার নমুনা চেয়েছে।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ পরীক্ষা করে আমরা ধারণা করছি, রাত ১২টার পর তাঁরা কেউ আর বেঁচে ছিলেন না। ৫ জন জঙ্গির পক্ষে ২০ জন মানুষকে এভাবে খুন করা স্বাভাবিক বিষয় নয়। খুনের পর কিছু মৃতদেহকে তারা বিকৃত করেছে। ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ৫ জঙ্গি কোনো বিশেষ ধরনের ড্রাগ আসক্ত ছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি আমরা। এ জন্য তাদের ভিসেরা ঢাকার রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হবে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও গুজরাটের একটি প্রতিষ্ঠানের নিহত ৫ জঙ্গির ভিসেরা নমুনা চেয়ে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এফবিআই ও গুজরাটের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। কিছু নমুনা পাঠানো হতে পারে।’
চিকিৎসকেরা জানান, ভিসেরা নমুনা হচ্ছে নিহত ব্যক্তির যকৃৎ, কিডনি, পাকস্থলী ও পাকস্থলীতে থাকা খাবারের নমুনা।
গত বছরের নভেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোদ্ধারা ক্যাপটাগন নামের একটি ওষুধ সেবন করে। এ কারণে এই ওষুধটি ‘আইএসআইএস ড্রাগ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ক্যাপটাগন সেবনের কারণে আইএসের যোদ্ধারা দিনের পর দিন জেগে থাকে এবং ঠান্ডা মাথায়, কোনো রকম সহমর্মিতাবোধ ছাড়া একের পর এক মানুষ খুন করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক ডিন আ ব ম ফারুক বলেন, ক্যাপটাগন ওষুধ হচ্ছে অ্যামফেটামিন গোত্রের। এটি যারা সেবন করে, তাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এর প্রভাবে এরা একরৈখিক চিন্তা করে। অন্য কিছু তারা আর চিন্তা করতে পারে না। তিনি বলেন, ক্যাপটাগন-জাতীয় ওষুধ এ দেশে নেই। পশ্চিমা দেশগুলোতে বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকে এটি নিষিদ্ধ। কেবল মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে এটি সহজলভ্য।
৭ জনকে ঘাড়ে গুলি: নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্তে যুক্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর জিম্মিদের ৭ জনকে পেছন থেকে ঘাড়ে গুলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৪ জন ইতালির নাগরিক, ২ জন জাপানের ও ১ জন ভারতের নাগরিক তারিশি জৈন। তারিশিকে গুলি করা ছাড়াও কোপানো হয়েছে। তাঁর দুই হাতসহ সারা দেহে চল্লিশটির মতো কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে।
তাঁদের বাইরে ১ জন বাংলাদেশি, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিকসহ ১০ জনের ঘাড়ে ও গলায় চাপাতির কোপ আছে। তাঁদের কারও কারও দেহে বোমার স্প্লিন্টারও পাওয়া গেছে। এর বাইরে বাংলাদেশি ১ জন নারী, ইতালীয় অন্তঃসত্ত্বা ১ জন নারী ও জাপানের ১ জন নাগরিকের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাতের প্রমাণ মিলেছে। তাঁদের মধ্যে জাপানের ১ জনকে হত্যার পর রেস্তোরাঁর ডিপ ফ্রিজে ভরে রাখা হয়েছিল।
ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসকদের ধারণা, নিহত ৫ জঙ্গির মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বোমার আঘাতে। বোমায় ১ জনের হাতের কবজি, ১ জনের হাত এবং ১ জনের মুখের একপাশ থেঁতলে গেছে।
১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের সময় জঙ্গিরা ১৮ জন বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের বোমায় নিহত হন ২ জন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে ওই রেস্তোরাঁর শেফ সাইফুল চকিদার এবং ৫ জন জঙ্গি নিহত হয়।
নিহত ব্যক্তিদের সবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ৪ জন চিকিৎসক ও তাঁদের ৫ জন সহকারী। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩ জুলাই সকাল ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত তাঁরা ময়নাতদন্ত করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। দু-এক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো