জঙ্গিবাদ রাজনীতির এক আঁকা-বাঁকা পথ।।আবদুল কুদ্দুস

বিশ্বাস মানুষকে মহান করে। আবার অন্ধবিশ্বাস মানুষকে বিপথে গমন করতে প্রলুব্ধ করে। নিজের জীবন, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। বিশ্বাসের থেকে পৃথিবীতে যেমন বড় কিছু নেই। তেমনি বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতাও করতে নেই । এটি অবধারিতভাবে একটি পাপ কাজ। মানুষ যে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা ধ্বংসের সামিল। ধরুন কেউ যদি মুসলিম হয়, তবে তাঁকে একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে ‘আত্মহত্যা’ একটি মহাপাপ।  এই একটি পাপের জন্য ঈমানদার ব্যক্তির জীবনের সমস্ত ভালো কাজের ফল বৃথা হয়ে যেতে পারে। পরকালে হতে পারে মহাশাস্তি। এটি কারো মুখের কথা নয়। এ কথাটি পবিত্র কালামে পাকের কথা।

‘আত্মহত্যা’ মহাপাপ কথাটির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেও আবার কেউ যদি আত্মহুতি/আত্মঘাতি হামলা করে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে ধর্ম কায়েমের অপকৌশলে লিপ্ত থাকে তবে এটি নিশ্চয় বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা। এটি একটি ঘৃন্য কাজ। নিজের শরীরে বোমা ফাটিয়ে নিজের কল্যাণ হয় না। মৃত্যু হয়। মানুষেরও কল্যাণ হয় না। ধর্মের প্রসার ঘটে না। বরং যে মারা গেল তার জন্য ধর্মের একজন প্রতিনিধি কমে গেল। ধর্মের নামে বিধর্মীদের জন্য সমালোচনা করবার পথ উন্মোচন করে দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবাদের কর্মকান্ড বাংলাদেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। জঙ্গিবাদের কারণে হতাহতের পরিমান বেড়ে গেছে। বিষয়টি মানুষের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে এটি আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি দেশের মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাগ্রত হতে হবে। কন্ঠ জাগ্রত করে, তাদের কাজে সর্বপ্রকারের অসহযোগিতা করে, তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থেকে অর্থাৎ সার্বিকভাবে তাদের কোনঠাসা করে জঙ্গিবাদ রুখতে হবে।

 

জঙ্গিবাদ নিরসনে কয়েটি বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন দেশের সরকার ও সুশীল সমাজ সাধারণ মানুষ ও উদীয়মান তরুন সমাজের মাঝে ‘Patriotism’  এর বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে তেমনি এর পাশাপাশি ‘জীবনপ্রেম’ বা ‘Love for life’, এ ব্যাপারটি মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত করবার লক্ষে পরিবার, মসজিদ, মন্দির, গির্জা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও সমাজে ব্যাপক আলোড়ন তুলতে হবে। এজন্য সাপোর্টিভ বিষয় হতে পারে, Religious guidance, participation of mass people in decision making, Effective Human resource planning, Human development oriented policy, law against extremism। মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকরী নীতি প্রয়োজন যার দ্বারা মানুষ সমাজে এবং রাষ্ট্রে অবদান রাখবে। জঙ্গিবাদের পথ ভুলে থাকবে। মানুষের মাঝে দেশপ্রেম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ বিষয়াবলি বিষয়ে পড়াশুনা যেমন ব্যধ্যতামূলক করা হয়েছে তেমনি জঙ্গিবাদের খারাপ প্রভাব দেখিয়ে এসমস্ত বিষয়ে বিশদ পড়াশুনা দরকার। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি উইং করে ‘খড়াব ভড়ৎ ষরভব’ মতবাদকে জোরদার করা বড় প্রয়োজন।

 
আজকে আমাদের বিষ্ময়ের বিষয় হলো, ruet, buet, duet, du,cu, ru, nsu ইত্যাদি ছাড়াও বিদেশের নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ না করে নিশ্চিত অবমাননাকর রাজনীতির পথ জঙ্গিবাদকে বেছে নিচ্ছেন। এর মূল কারণ নিজের জীবনকে মূল্যহীন ভেবে সংক্ষিপ্ত পথে পরম সুখ জান্নাত লাভের আশা । কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা এটি শুধুই সময়ের মোহ।

 
আশা জাগানিয়া বিষয় হলো, শেখ হাসিনা সরককারের সর্বমহলে জঙ্গিবাদ নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর  উদাহরণ হলো সম্প্রতি সিলেটের আতিয়া মহলে সফলতার সহিত জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান, কুমিল্লা ও মৌলভিবাজারে সফলভাবে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, গত ৩০ মার্চ আমি আমার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা অডিটোরিঅমে একটি উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেই অডিটোরিয়ামের দেয়ালে জঙ্গিবাদ বিরোধী নানাধরনের কথা লিখিত ছোট ছোট ব্যানার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ওই ব্যানারগুলোতে কোরআন ও হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদের  ক্ষতিকর নানা দিক পরিস্কার করে তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে একাজটি পুরোপুরি সফল করতে চাইলে সরকারের সাথে দেশের আপামর জনসাধারণকে শতভাগ জেগে উঠতে হবে।

 

সরকারের উন্নয়ন মেলায় প্রদর্শিত উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক ও জঙ্গিবাদের কারণে শান্তি ও উন্নয়নে কিভাবে প্রভাব পড়ছে তা তুলে ধরতে হবে। এজন্য স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বিমাসহ সব ধরণের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানেও জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কেননা, যারা জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত বলে আমারা দৈনন্দিন খবর পাচ্ছি তাদের মধ্যে অনেকে বড়বড় সরকারারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের কতকর্তারাও রয়েছেন। বিষয়টি শুধু আলোচনা আর গবেষণার পর্যায়ে না রেখে সরকারকে সহযোগিতার জন্য দেশের বিত্তবানদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রনের জন্য উন্নত যন্তপাতি ক্রয় এবং প্রশিক্ষনের ব্যয়ভার বহন করতে যে অর্থ প্রয়োজন তাতে বিত্তবানদের অংশগ্রহণে এ পক্রিয়ায় দারুন উপকারে আসতে পারে।

 
ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে জঙ্গিবাদ যে বাধা তা দূরিকরণে ব্যবসায়ীদেরও সরকারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। জঙ্গিবাদের পরাজয় ঘটলে জয়ী হবে দেশ ও দেশের মানুষ। জিতে যাবে দেশের সরকার। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হবে।

 
লেখক: মো. আবদুল কুদ্দুস
শিক্ষক, বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ
ও সহকারী প্রক্টর
নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী
মোবাইল: ০১৭১৭৮৫৪১০৪