জঙ্গিদের জরুরি যোগাযোগ টেলিগ্রামে, প্রাথমিক ফেসবুকে!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: জঙ্গি তৎপরতা রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অ্যাপস মনিটরিং চললেও এখনও অনলাইনই তাদের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। এর মধ্যে প্রাথমিক যোগাযোগ ফেসবুকে। আর ওয়ান-টু-ওয়ান যোগাযোগ করছে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে। এসব অ্যাপসের অনেকগুলো এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

বিপুল পরিমাণ মানুষের ‘অ্যাকসেস’ থাকা এবং সহজে ব্যবহারের কারণে একাধিক পেজে পাবলিক গ্রুপ ওপেন যোগাযোগের মধ্য দিয়ে মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছেন অনলাইন যোগাযোগ বিশ্লেষকরা।

জঙ্গিদের কাছে জনপ্রিয় অ্যাপস টেলিগ্রামে জরুরি ও অতি গোপন যোগাযোগ করার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। জিহাদের নানা টেক্সট আদান-প্রদান থেকে শুরু করে হামলা পরবর্তী দায় স্বীকার সবটাই চলছে টেলিগ্রামে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুকই হাতিয়ার। এটি যেহেতু বাণিজ্যের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট সেহেতু তারা নির্বিকার থাকছে এখনও। যদিও এভাবে মৌলবাদ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে কেবল বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিহ্নিত ফেসবুক পেজগুলোয় নিয়মিত ধর্মীয় উগ্র মতামত প্রচার করা হয়। ধর্মীয় নানারকম অপব্যাখ্যা বা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে কথিত জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। এগুলো দেখে অনেকেই ভুল করে এসব পথে পা বাড়াচ্ছে। ফেসবুকের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইটেও চলছে উগ্র মতবাদের প্রচার। এসব যাতে চালাতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে কিছু ফেসবুক পেজ, আইডি, ব্লগ ও ওয়েবসাইট বন্ধও করা হয়েছে। কিন্তু একটি বন্ধ করা হলে জঙ্গিরা নতুন নামে আরেকটি পেজ বা আইডি খুলে একই কাজ শুরু করে।

যদিও টেলিগ্রাম মনিটরিংয়ে সে অর্থে এখনও সম্ভব না বলে মনে করছেন সন্ত্রাসবাদ ও নিউ মিডিয়া বিষয়ক গবেষক নির্ঝর মজুমদার। তিনি বলেন, ‘যদি কোনও নির্দিষ্ট টুইটার অ্যাকাউন্ট “X”, “Y” এবং “Z” ফলো করে তাদের তিনজনকে ওই সংগঠন টেলিগ্রামের কোনও গ্রুপে বা পাবলিক চ্যানেলে সংযুক্ত রাখে। ফলে ওই টুইটার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হলেও নতুন করে যদি তারা অন্য অ্যাকাউন্ট খোলে এবং সেই সংবাদ (বা লিংক) তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সরবরাহ করে দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই একই ইউজাররা নতুন টুইটার অ্যাকাউন্টটির খোঁজ পেয়ে যায়। ফলে বন্ধ করে খুব উপকারে আসছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল উদ্দেশ্য হলো, এই নতুন অ্যাকাউন্ট গুলো খুলে ফেলার পরে অত্যন্ত দ্রুত সময়েই সেই অ্যাকাউন্টগুলোয় আগের ফলোয়াররা সংযুক্ত হতে পারে। এতে করে তাদের প্রচারণাকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হয় না। এই কৌশলটির কারণেই অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় কোনও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলেও অত্যন্ত অল্প সময়ে সেই একই প্রচারণাগুলো পুনরায় সহজলভ্য হয়ে ওঠে।’

নিজেদের মধ্যে কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানের জন্য আরও একটি কৌশল কাজে লাগায় জঙ্গি সংগঠনগুলো। তা হলো টুইটারে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ, যেগুলো খুঁজে বের করা বেশ পরিশ্রম সাপেক্ষ। এতে করে যা হয়, তা হলো প্রকাশ্যে থাকলেও তাদের তথ্য বা কথা বার্তা সেই নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগটি না জানলে খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না।

করণীয় কি প্রশ্নে নির্ঝর মজুমদার বলেন, ‘এই প্রচারণার ক্ষেত্রে এবং নিজস্ব যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা এতটাই প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে রয়েছে যে তাদের গোপনীয় কথোপকথন এবং নিজস্ব যোগাযোগ ফাঁস হওয়ার বা প্রযুক্তিগতভাবে সেগুলো মনিটর করাটা অত্যন্ত কঠিন।  এক্ষেত্রে এক মাত্র করনীয় হল তাদের প্রকাশ্য প্রচারণা মাধ্যমগুলো নজরদারি করে সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা এবং সেগুলো কারা চালাচ্ছে বা অন্ততপক্ষে কোন দেশ থেকে সেগুলো চলছে, সেটি খুঁজে বের করা।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেনারেল রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ফেসবুক মনিটরিং সক্ষমতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। যারা চালাচ্ছে তাদের পোস্টে লাইক ও কমিউনিকেশনে বেশি লোক সংশ্লিষ্ট থাকলে সেটাও তাদের ব্যবসা। ফলে তারা যতটা সম্ভব নির্বিকার থাকতে চায়। চাপের মুখে যা বন্ধ করা হয়েছে তা অপ্রতুল। বিশ্বব্যাপী সমস্যা হওয়ায় এটা সবাই ঝুঁকিতে এটা বিশ্ববাসী যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল। সাইটগুলোতে তাদের নজরদারি থাকতে হবে যাতে করে জেহাদি টেক্সট ছড়াতে না পারে। এখন বাংলা কনটেন্টও মনিটর করা কোনও বড় বিষয় না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টার্গেট মোটিভেশনের কাজটি প্রাথমিকভাবে ফেসবুকের মাধ্যমেই করে থাকে। এরপরে যখন ওয়ান-টু-ওয়ান যোগাযোগে যায় তখন নানা অ্যাপস ব্যবহার করে।’ টেলিগ্রামের ব্যবহার বেড়েছে কিনা জিহাদি টেক্সট ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আরও বেশকিছু অ্যাপস আছে যেগুলো তারা ব্যবহারের চেষ্টা করার নানা উদাহরণ পাওয়া গেছে।’

মনিটরিং এর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরানজরদারির মধ্যেই রেখেছি।’

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন