‘চোরাচালান নয়, পুরনো সোনা রিফাইন করে বিক্রি করি’- বলছেন আপন জুয়েলার্সের মালিক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: দেশের একটি শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, আপন জুয়েলার্সে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানের পর প্রতিষ্ঠানটির মালিক দাবী করছেন তাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বর্ণ চোরাচালানের কোন সম্পর্ক নেই।

ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের ৫ টি শাখায় শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাচ্ছেন।

জুয়েলার্সটির একজন মালিকের ছেলে সম্প্রতি বহুল আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী এবং জুয়েলার্সটি বর্জনের জন্য গত বেশ কিছুদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চলছে।

দীর্ঘদিন যাবত কোন স্বর্ণ আমদানী না করেও কীভাবে তারা এই ব্যবসা চালাচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে শুল্ক গোয়েন্দারা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের সাথে, যিনি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা। তার দাবী, চোরাচালানের সাথে তাদের এই পারিবারিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত নয়।

“আমাদের ৪০ বছরের ব্যবসা। চোরাচালানের সাথে আমরা যুক্ত থাকবো কেন?”

কিন্তু আমদানী না করে এত বড় ব্যবসা কীভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরনো স্বর্ণ রিফাইন (পুন:ব্যবহার) করে এবং বিদেশ থেকে ১০০ গ্রাম করে যে স্বর্ণ আনে, সেটা তাদের কাছে অনেকে বিক্রি করেন।

ঢাকার বনানীতে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার মূল আসামী এই আপন জুয়েলার্সের একজন মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ।

সেই ধর্ষণের অভিযোগের সূত্র ধরেই গত কয়েক সপ্তাহ যাবত যেমন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে জুয়েলার্সটি বর্জনের ডাক আসছে, তেমনি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ধর্ষণের শিকার নারীদের বক্তব্যের সূত্র ধরে চোরাচালানের সাথে জুয়েলার্সটির যুক্ত থাকার অভিযোগ এসেছে।

তবে সেটিকে কেন্দ্র করে কিনা সেটি সরাসরি না বললেও, অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থার যুগ্ম পরিচালক শাফিউর রহমান বিবিসিকে বলছিলেন, তারা চোরাচালানের সাথে আপন জুয়েলার্সের যুক্ত থাকার তথ্য পেয়েছেন।

“তারা স্মাগলড গোল্ডের ব্যবসা করছে এমন একটি ক্লু থেকেই আমরা ভাবলাম যে আমরা পরীক্ষা করে দেখি, তারা কী পরিমাণ গোল্ড বৈধভাবে কিনেছে এবং তাদের শো রুমগুলোতে যে পরিমাণ গোল্ড এবং ডায়মন্ড আছে তাতে কোন ফারাক আছে কিনা। আমরা জানতে পেরেছি যে তারা স্মাগলড গোল্ড এবং ডায়মন্ডের ব্যবসা করে”।

ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে সেখানে স্বর্ণ এবং হীরার মজুদের তথ্যের সাথে মোট স্বর্ণের পরিমাণ মিলিয়ে দেখছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। একটি শাখা বন্ধ থাকায় সেটি সীলগালা করে দিয়েছেন তারা।

গোয়েন্দারা বলছেন, কতটুকু স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে প্রতিবচর স্বর্ণ আমদানীর অনুমতি নিতে হয় জুয়েলার্সগুলোকে। কিন্তু গত ৫ বছরের তথ্যে দেখা গেছে, আপন জুয়েলার্স স্বর্ণ আমদানী করছে না।

কিন্তু কোন স্বর্ণ আমদানী না করে বাংলাদেশের শীর্ষ একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠাণ কীভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, সেনিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তারা।

তবে আপন জুয়েলার্সের মালিক মি. আহমেদ তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর কী পরিমাণ কেনাবেচা হয় সেবিষয়ে কোন তথ্য দেননি । তবে তদন্তে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে জানান।

আপন জুয়েলার্স বর্জনের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে প্রচারণা চলছে তাতে তাদের ক্রেতা কমেনি বলেও দাবী করেন দিলদার আহমেদ।

যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপন জুয়েলার্সের ক্রেতা গত কিছুদিনে কমে গিয়েছিল বলে খবর এসেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মি. রহমান বলছিলেন, তারা এখন নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এসব দোকানের স্বর্ণ এবং হীরার তালিকা তৈরি করবেন। সেটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন।

“পাঁচ বছরে আমদানী নেই মানে হচ্ছে তাদের যে স্বর্ণ ব্যবহার হয়, সেটা বৈধভাবে দেখানোর সুযোগ নেই। অথবা তারা নিলাম থেকে কিংবা রিসাইকল স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সেই স্বর্ণ দিয়ে কি এত বড় প্রতিষ্ঠান চলে?”- বলেন মি. রহমান।

শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, অন্য কোন স্বর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণের বিরুদ্ধে অবৈধ বা চোরাচালান করা স্বর্ণ ব্যবহারের অভিযোগ পেলে তারা সেখানেও তদন্ত করবেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা