চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ১৫ যুদ্ধাপরাধীর মামলা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন সহ ১৪ জন যুদ্ধাপরাধীর মামলা আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।

 

এর মধ্যে মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আগামী ২৫ জুলাই আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।

 

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন, জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও আবদুস সুবহান, জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী হবিগঞ্জের সৈয়দ মুহম্মদ কায়সার, সাবেক মুসলিম লীগ নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আফসার হোসেন চুটু ও মাহিদুর রহমান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজ, খান আকরাম হোসেন, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের এবং হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত  হবিগঞ্জের আব্দুর রাজ্জাক খালাস চেয়ে আপিল করেছেন এবং আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত পিরোজপুরের সাবেক এমপি পলাতক জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের সাজা বৃদ্ধি তথা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এগুলো আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আপিল ক্রম অনুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের আপিল মামলাটি শুনানির জন্য আগে তালিকায় আসবে বলে জানা গেছে।

 

অন্যদিকে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদনও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

 

আপিল নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কামারুজ্জামান ও সাঈদীর আপিল নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে ১৭ মাস। মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর করে। নিজামীর আপিল নিষ্পত্তি হতেও প্রায় দুই বছর লেগেছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম সময় (ছয় মাস) লেগেছে কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তি হতে।

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ  বলেন, ‘আপিল বিভাগে মামলার চাপ বেশ লক্ষণীয়। আমাদের প্রধান বিচারপতি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে অনেক তৎপর ও এ জন্য তাঁর বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। দেখা যাচ্ছে অপিল বিভাগে অন্যান্য মামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগছে বেশ। অনেক দেশে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিশেষ মামলার আপিল নিষ্পত্তি করতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। জাতির জনক হত্যাকাণ্ডের মামলাও নিষ্পত্তির জন্য আপিল বিভাগে বিশেষ বেঞ্চ করা হয়েছিল। এসব মামলার আপিলের ক্ষেত্রেও আপিল বিভাগে একটি বিশেষ বেঞ্চ করলে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে অপরাধীদের সাজা কার্যকর সম্ভব। এতে কোনো আইনি বাধা নেই।

 

আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগে ছয়টি রায়ের মধ্যে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের  রিভিউ এখনও  নিষ্পত্তি হয়নি।

 

এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

 

এদিদে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য ২৫ জুলাই দিন ধার্য রয়েছে। তার রিভিউ আবেদন খারিজ হলে দণ্ড কার্যকর করতে আর বাধা থাকবে না।

 

ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা : জাতীয় পার্টির এমপি ময়মনসিংহের এম এ হান্নান, যশোরের সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেন, সাতক্ষীরার সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবদুল খালেক মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন আছে ট্রাইব্যুনালে। একটি মামলা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আরো ৬৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। পর্যায়ক্রমে তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।

 

সূত্র:রাইজিংবিডি