বুধবার , ৩ জুলাই ২০২৪ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনা ঋণের অপেক্ষায় মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন

Paris
জুলাই ৩, ২০২৪ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ভারত, ভুটান, নেপাল, চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মোংলা বন্দর কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। জল ও স্থলভাগের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এ সমুদ্রবন্দরের সুবিধা বাড়াতে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাসহ নানা কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি এখনো। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে বন্দরটির আধুনিকায়নের বিষয়ে আলোচনা হলে বাধা দূর হতে পারে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে মোংলা বন্দর এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোর কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বন্দরটির ব্যবহার অনেক সম্ভাবনাময়। গত নভেম্বরে খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হয়েছে। কিন্তু সে হিসাবে বন্দরের বিদ্যমান সুবিধা অপ্রতুল। বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙর করতে পারে, কিন্তু কোনো কনটেইনার জেটি নেই। বার্ষিক ১ কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং ১ লাখ কনটেইনার (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে) হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। এ অবস্থায় বন্দরটির আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্প নেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এতে চীন সরকার (জিটুজি) ঋণ দেওয়ার কথা ৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এটি বাস্তবায়নের কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্মার্ট সল্যুশন ও আধুনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতিসহ কনটেইনার টার্মিনাল বা জেটি নির্মাণ, কনটেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ এবং কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। এর ফলে আধুনিক বন্দর সুবিধাসহ মোংলার কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়বে, বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সুবিধাও বাড়বে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা তা জানা নেই। তবে চীনের পক্ষ থেকে আলোচনা উত্থাপিত হতে পারে।’ ঋণচুক্তির বিষয়টি ইআরডির।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বন্দরের আধুনিকায়নে এটি দরকারি প্রকল্প।

জানা গেছে, যে কোনো বন্দরের জন্য মাল্টিমডাল যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু হওয়ার পর সড়ক পথে বন্দরের পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এবার রেলপথে পণ্য পরিবহন করা হবে। এই রেললাইনের ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে- স্বল্প খরচে কনটেইনার পরিবহন করা যাবে। এতে করে বন্দরের ব্যবহারও বাড়বে। গার্মেন্টস পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সহজতর হবে। এছাড়া বিদেশি প্রটোকল ব্যবহার করে খুলনা-মোংলা রেললাইন দিয়ে নেপাল-ভুটানে পণ্য পরিবহন করা যাবে। বাড়বে বন্দরের রাজস্ব। ইতোমধ্যে মোংলা বন্দরের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৯৭০টি জাহাজ হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হয়েছে ৭০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে।

সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বরের ওই সভার নির্দেশনা অনুসারে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, প্রকল্পটির অর্থায়নের বিষয়ে জিওবির ৫০০ কোটি টাকার ৫ শতাংশ হারে গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরকে পরিশোধ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী ৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ বাবদ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প অনুমোদনের পর এর ঋণ পরিশোধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবসিডিয়ারি লোন এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সই করতে হবে। মোংলা বন্দরের যাবতীয় পরিচালন ব্যয় নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বহন করা হয়। সরকার থেকে নেওয়া হয় না। তাছাড়া কর্তৃপক্ষের পরিচালন, মেরামত ও নিজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদনের পর অর্থ পরিশোধ কষ্টসাধ্য। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির অর্থ অনুদান মঞ্জুরের জন্য বিবেচনার সুপারিশ করে কমিটি। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি প্রতিবেদনে সই করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চীনা সরকারের সফট লোনে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। চায়না ন্যাশনাল কমপ্লিট ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিসিইসি) সঙ্গে এমওইউ সই হয় ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর। পরে তা বাতিল হয়। ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর চীন সরকার প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরের বছরের ১০ জানুয়ারি চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ঠিকাদার হিসাবে মনোনীত হয়।

নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে- সিসিইসিসির আর্থিক প্রস্তাব বাংলাদেশের বাজারদর ও পিডব্লিউডির রেট-এর সঙ্গে তুলনা করে এবং দেশি-বিদেশি বাজারের সঙ্গে তুলনাপূর্বক নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে ১৬.৫১ শতাংশ কমানো হয়েছে আর্থিক প্রস্তাব।

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়