’চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’

বেশ কিছুক্ষণ আগের কথা । পরপর দুটো কল আসলো সাত সমুদ্দুর তেরো নদীরও বেশি দূর থেকে । বড়ভাই শাহিন পাপুয়া নিউগিনি আর বড়ভাইতুল্য বনিভাই রিং দিলেন আর্জেন্টিনা থেকে । এদেশের ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ছটা । ওশানিয়ার পাপুয়াতে তখন রাত দশটা আর ল্যাটিন আমেরিকার আর্জেন্টিনায় সকাল আটটা ।

 

ঢাকা থেকে প্রথমটার দূরত্ব পৌনে পাঁচ হাজার মাইল, পরেরটা মাত্র(!) সাড়ে দশ হাজার মাইল । অফিসের কাজে শাহিন গেছে পাপুয়ার মানাস(Manus-মানুষ বললেই বা কি যায় আসে) দ্বীপে আর জীবনসঙ্গিনীকে নিয়ে বনিভাই গেছেন নেহাতই ঘুরতে ।

 


প্রশান্ত মহাসাগরের অথৈ নীল নিঃসীম জলের মাঝে এই মানাস দ্বীপ । বিষুব রেখার পাশে থাকায় হররোজ সেখানে বৃষ্টিবাদল । সে কারণেই ঠাসবুনোটের গভীর জংগল । লোকজন বলতে গেলে চোখেই পড়ে না । তিন-চারটা শহর নামের টাউনশিপ । সেখানেও একই অবস্থা ।

 

শাহিনের কাছ থেকে এসব শুনতে শুনতে ছেলেবেলায় পড়া রহস্য সিরিজের বই ‘দস্যু বাহরাম’ আর ‘দস্যু বনহুর’এর গা শিরশিরে বন-জংগলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল । স্যাঁতস্যাঁতে দুর্ভেদ্য জংগল । পিচ্ছিল সরু বনপথ, দিনের আলোও ঠিকমতো পৌঁছায় না, সে পথে দস্যু বাবাজি চলেছেন বীরের বেশে ঘোড়া হাঁকিয়ে !

 


শুনি মহাসাগরের উথালপাতাল ভয়ংকর চেহারার কথা, সোঁ সোঁ বাতাসের কথা । শুনি আরো সব টুকটাক গল্প । শুনতে শুনতে এমন না দেখা দেশ আমার আপন হয়ে ওঠে ।

 

ওদিকে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে বসে বনিভাই । ওঁর কাছে শুনি আরেক পৃথিবীর গল্প । আটলান্টিক নামের মহাসাগর পেরিয়ে শীতকাতর দিন টের পেতে আমার কষ্ট হয় না । দক্ষিণে চলছে এখন তীব্র এক ঠাণ্ডাকাল । পাতাগোনিয়া মরুর শেষ মাথায় পড়ছে অবিরাম বরফ ।

 

স্মরণ করিয়ে দিই রবি ঠাকুরের সেই ভালোবাসার নারী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কথা, যে কাব্যসুন্দরীকে নিয়ে লিখেছিলেন, আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী ..। অনেকেই জানি না, সেই বিদেশিনী আজো ওই দেশের দু-তিনজন হাতেগোনা বড় সাহিত্যিকদের একজন হয়ে আছেন ।

 

যে বাগানবাড়িতে রবি ঠাকুর বেশ কিছুদিন সেই নারীর সান্নিধ্যে কাটিয়েছিলেন, সে বাড়ি আজ মেমোরিয়াল হিসেবে সম্মানের সংগে সংরক্ষিত । আর কিংবদন্তীর সেই বাড়িতেই পোঁছে গেলেন বনিভাই, জানালেন অজানা অনেক কথা । চমৎকার ভিডিওটি দিয়ে পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠার গল্প জানিয়ে দিলেন । বন্ধুদেরকে সেই গালগল্প নিজচোখে দেখার অনুরোধ জানাই আর না দেখলে, আপনিই ঠকে যাবেন ।

লেখক: কবি ও লেখক