চিনিকলের জায়গা সাঁওতালদের ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব ১৪ দলের শরিকদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের চিনি কলের জায়গা সাঁওতালদের ফেরত দেওয়ার জন্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে প্রস্তাব করেছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা। রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সম্পত্তি তারা ‘এনিমি প্রোপার্টি’ হিসাবে সাঁওতালদের দেওয়ার প্রস্তাব করেন তারা।

 

রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় শরিক দলের নেতারা এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।  বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা  নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

তবে জোটের শরিক দলের নেতাদের এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা বলেন, ‘এই জায়গা সাঁওতালদের দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এটি চিনি কলের জায়গা, চাইলেই সরকার কাউকে দিয়ে দিতে পারে না।’

 

সূত্র জানায়, বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ওই সম্পত্তি সাঁওতালদের ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করে বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যে সমর্থন জানান শরীক দলের অন্য নেতারাও।

 

জবাবে সরকার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এটি চিনিকলের সম্পত্তি চাইলেই সরকার এ জমি কাউকে হস্তান্তর করতে পারে না।’

 

পরে বাদশা বলেন, ‘চিনি কল যে শর্তে ‘লিজ’ নেয় জায়গাটি, এখন সেখানে আর তা হয় না। ফলে ‘এনিমি’ সম্পত্তি হিসাবে সাঁওতালদের দেওয়া যেতে পারে ‘

 

জবাবে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এনিমি সম্পত্তি’ হিসাবে দিতে গেলে বাংলাদেশের অনেক সরকারি জমিই অনেককে দিয়ে দিতে হয়।’

 

পরে উভয় পক্ষের আলোচনার পর উত্থাপিত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আর আগায়নি।

 

গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে আখ কাটতে গেলে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন সাঁওতাল মারা যান, আহত হন অনেকে। পরে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাঁওতালদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। যারা নিজেদের ওই জমির মালিকানার দাবিদার।

 

সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের এক হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে। সম্প্রতি চিনিকল কর্তৃপক্ষ ওইসব জমি লিজ দিলে তাতে ধান-পাটসহ বিভিন্ন ফসলেরর চাষ শুরু হয়। ফলে প্রায় দুই বছর আগে সাঁওতাল ও স্থানীয় কিছু বাঙালি হিন্দু-মুসলমান চিনিকলের বিরুদ্ধে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে তাদের বাপ-দাদার জমি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এর এক পর্যায়ে সাঁওতালরা খামারে বসতি গড়ে তোলে। একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করে তারা।

 

এরপর সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া ও কমিউনিষ্ট পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায় ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ঘটনাটি আলোচনায় নিয়ে আসেন। তারা নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্তদের ভালোভাবে সাহায্য করার প্রস্তাব আনেন।

 

জবাবে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এ সময় তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের আশ্বস্ত করেন।

 

ছোট দল-বড় দল বিতর্ক

রবিবার জোটের বৈঠকে বড় দল, ছোট দল নিয়ে এক বিতর্ক ওঠে।

 

সূত্র জানায়, বৈঠকের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ বড় দল-ছোট দল সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে বলে বক্তব্য দিলে জোটর শরিক দলের নেতারা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন।

 

জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারসহ শরিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ‘আমরা ছোট দল। এভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের ‘মেনশন’ করি। বিষয়টি বিব্রতকর। আপনারাই যদি বলেন, ছোট দল!’

 

তখন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমরা কোনও দলই ছোট বা বড় দল নই। আমরা সবাই সমান।’

 

পরে বিতর্কের অবসান হয়।

 

এরপর খালিদ মাহমুদ অনেকটা মজা করে বলেন, ‘ছোট হলেও আর যেন ছোট না হয়।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন