চিড়ি নদীর দূষিত পানিতে মারা যাচ্ছে তুলসীগঙ্গা নদীর মাছ

নিশাত আনজুমান, আক্কেলপুর :
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে জয়পুরহাট চিনিকল থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্য চিড়ি নদীর মাধ্যমে এসে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি দূষিত করার পাশাপাশি নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে এমন অভিযোগ ওঠেছে। নদীর মাছ মারা যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবীরা। তবে চিনিকলের বর্জ্য আসার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আখ মাড়াই মৌসুমে চিড়ি নদী দিয়ে জয়পুরহাট চিনিকলের দূষিত বর্জ্য এসে তুলসীগঙ্গা নদীর পানিতে মিশে। এতে দুইটি নদীর পানিই কালচে বর্ণ ধারণ করে। দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে নদীর আশেপাশের এলাকায়। কৃষি কাজ ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি মারা যায় নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী। এই বছরও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভেতর দিয়ে চিড়ি নদী ও পাশর্^বর্তী ক্ষেতলাল উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে আসা তুলসীগঙ্গা নদীর পানি প্রবাহিত হয় আক্কেলপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে । দুটি নদীর পাশেই রয়েছে পর্যাপ্ত লোকালয় ও ফসলী কৃষি জমি। তুলসীগঙ্গা নদীতে রয়েছে মাছের একটি মাত্র অভয়াশ্রম। এছাড়াও নদীতে মাছ শিকাড় করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক জেলে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের আওয়ালগাড়ি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চিড়ি নদীর কালো বর্ণের দূর্গন্ধযুক্ত এসে পড়ছে আক্কেলপুর পৌর সদরের সোনামুখী সেতু এলাকায় তুলশীগঙ্গা নদীতে। এতে উপজেলার জামালগঞ্জ পাঁচ মাথা থেকে সোনামুখী তুলশীগঙ্গা নদী পর্যন্ত চিড়ি নদী এবং উপজেলার মাদারতলী ব্রিজ এলাকা থেকে আক্কেলপুর পৌর এলাকার কলেজ বাজার পর্যন্ত তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে, মরে ভেসে ওঠছে নদীর মাছ। নদীতে মাছের অভয়াশ্রম সহ নদীর বিভিন্ন স্থানে মাছ শিকার করছে জেলে ও স্থানীয়রা।
উলিপুর গ্রামের আব্দুল মন্ডল বলেন, চিনিকলের বিষাক্ত পানি নদীতে আসায় সকল মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এতে করে মাছ শুন্য হয়েছে তুলসীগঙ্গা নদী। এখন থেকে তিন চার মাস নদীতে কোন মাছ পাওয়া যাবে না।
চিড়ি নদীর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মোত্তালেব বলেন, চিনিকলের বর্জ্যের দূষিত পানিতে চিরি ও তুলশীগঙ্গা নদীর পানি কালচে ও দুর্গন্ধ হয়েছে। এই পানি দিয়ে কৃষকরা জমিতে সেচ দিতে পারছেনা। দূষিত পানি নিষ্কাষন বন্ধে আমরা এর আগে অনেকবার আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছি।
উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাশফেকুর রহমান বলেন, বিষাক্ত বর্জ্যমিশ্রিত পানি নদীতে প্রবেশের কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই নদীর মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে কোন জলজ প্রাণীই বাঁচতে পারবে না। আগামী তিন থেকে চার মাস নদী মৎস্য শুন্য হয়ে যাবে। বর্ষা কালে নতুন পানি আসলে আবার মাছ পাওয়া যাবে নদীতে। এই সময়গুলোতে জেলেরা অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিন কাটায়। বিষয়টি নিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, নদীর দূষিত কালো পানি দিয়ে কৃষি জমিতে সেচ কাজ না করার জন্য কৃষকদের নিরুৎসাহী করছি। এতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপক আখলাছুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, চিনিকলে আমাদের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে। সেখানে নিয়মিত দূষিত পানি শোধন করা হচ্ছে। নদীর পানি কেন দূষণ হচ্ছে তা আমার জানা নেই। নদীতে আসা দূষিত পানি তাদের কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সেটি বলছি না। আপনি এসে দেখে যান।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন বলছেন, নদীর পানি বিভিন্ন কারণে দূষণ হতে পারে। সুগার মিলের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিদর্শন করে দূষণের দায় পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, এ বিষয়ে জেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিং-এ চিনিকল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে।