চিকিৎসায় প্রতিরোধযোগ্য রোগ নিউমোনিয়া

গতকাল ছিল বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একজন শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। শিশুদের সংক্রামক রোগের মধ্যে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার সর্বাধিক। নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ কারণ দূষিত বায়ু গ্রহণ। এ থেকে সুরক্ষার জন্য শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবন রক্ষাকারী ও কার্যকরী ভ্যাকসিন গ্রহণ, অ্যান্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার, অক্সিজেন পাওয়ার নিশ্চয়তা এবং বিশুদ্ধ বাতাস ও পানি গ্রহণের বিকল্প নেই। প্রাণঘাতী নিউমোনিয়া নিয়ে লিখেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন

বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ফুসফুসে নিউমোনিয়া রোগ হয়। ফুসফুসের একদিকে বা উভয় অংশকে এ জীবাণু আক্রান্ত করতে পারে।

নিউমোনিয়ার জীবাণু শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসনালির মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং বায়ুথলিতে এসে বাসা বাঁধে। ফলে বায়ুথলিগুলোতে শ্লেষ্মা, পুঁজ ও অন্যান্য তরলের সৃষ্টি হয় এবং জমা হয়। এ কারণে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়।

নিউমোনিয়ার সাধারণ উপসর্গ হলো কাশি, অনেক ক্ষেত্রে গাঢ় শ্লেষ্মাযুক্ত কফ থাকতে পারে। কফ সবুজ, বাদামি বা রক্তের ছিটেযুক্তও হতে পারে।

কারণ

শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণগুলো বয়স অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। শ্বাসতন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া, নিউমোকক্কাস, ট্রেপ্টোকোকাস নিউমোনিয়া এবং হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া প্রায়শই ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সের শিশুদের মধ্যে দেখা যায়। ভাইরাল নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যাডেনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, শ্বাসযন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাস এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দায়ী।

ব্যাক্টেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং যারা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাদের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং কম মারাত্মক হয়।

লক্ষণ

শিশুদের মধ্যে লক্ষণগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট নাও হতে পারে। সংক্রমণের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হলো-

ক. জ্বর

খ. দুর্বল ভাব

গ. দ্রুতগতির, ঘনঘন ভারী শ্বাসপ্রশ্বাস

ঘ. শ্বাসের সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দ

ঙ. খাওয়ানোতে অসুবিধা হওয়া

চ. ক্লান্তি বা ঝিমুনি ভাব

চিকিৎসা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতেই চিকিৎসা করা যায়। কখনো কখনো চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।

হাসপাতালে চিকিৎসার মধ্যে শিরায় বা ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিক এবং শ্বাসযন্ত্রের থেরাপি (শ্বাসপ্রশ্বাসের চিকিৎসা) অন্তর্ভুক্ত। গুরুতর ক্ষেত্রে আইসিইউ-তে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়

নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে-

* শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্তন্যপান করানো অপরিহার্য।

* ঘরের পরিবেশ শুষ্ক, উষ্ণ গরম এবং ভালো বায়ু চলাচল থাকা আবশ্যক।

* সর্দি, ফ্লু বা অন্য সংক্রমণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।

* সময়মতো টিকা দিতে হবে।

নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন। যদি ব্যাকটিরিয়াজনিত নিউমোনিয়া হয় তখন অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হবে। ওষুধগুলো সময়মতো নিতে হবে, যা শিশুকে দ্রুত সুস্থ হতে এবং সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করতে সহায়তা করবে। শিশুর তাপমাত্রা প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় কমপক্ষে একবার দেখতে হবে। যদি তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)-এর বেশি হয়, তবে জ্বর হ্রাসের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে।

মনে রাখবেন

বাচ্চার বয়স যদি তিন মাসের কম হয়, বাচ্চা যদি খাওয়া একেবারে ছেড়ে দেয়, শ্বাস নেওয়ার গতি ২ মাসের কম বয়সি শিশুর মিনিটে ৬০ বার, ২ মাস থেকে ১ বছরের পর্যন্ত বাচ্চার প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি এবং ১ থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুর মিনিটে ৪০ বারের বেশি হলে, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের পাজড় ডেবে যায় কিংবা বাচ্চার ঠোঁট, জিহ্বা নীল হয়ে গেলে বাচ্চাকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এসবই মারাত্মক নিউমোনিয়া বা রোগের লক্ষণ। যদি শ্বাসকষ্ট হয় বা ঠোঁট, জিহ্বা নীলাভ বর্ণ ধারণ করে তখন জরুরিভাবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা নিকটতম হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর