চার মাসেও উদঘাটন হয়নি রাণীনগরে নৈশ্য প্রহরী মীর হত্যার রহস্য

নওগাঁ প্রতিনিধি;
নওগাঁর রাণীনগরের ত্রিমোহনি উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ্যপ্রহরী মীর হোসেন (৪৫) হত্যা মামলার রহস্য ৪ মাসেও উদঘাটন হয়নি। ফলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে হতাশায় পড়েছেন পরিবারটি। এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষমতা ব্যাক্তি মীর হোসেন হত্যার পর থেকে ওই পরিবারের সদস্যরা চলছেন অর্ধাহারে-অনাহারে।

জানা গেছে, উপজেলার মধ্য রাজাপুর গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে মীর হোসেন ত্রিমোহনি উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশ্যপ্রহরি পদে দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে চাকুরিতে কর্মরত ছিলেন। গত ১ জুন  বিকেলে বাড়ী থেকে নওগাঁ যাবার কথা বলে বের হয়ে যান। নওগাঁ কাজ শেষে রাতে স্কুলে থাকবেন জানিয়েছিলেন পরিবারকে। এর পর ওই স্কুলে সে ঘুমন্ত অবস্থায় কে বা কারা  তাকে এ্যলোপাথারি মারপিট করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় । সকালে স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে রাণীনগর হাসপাতালে ভর্তি করায় । রাণীনগর হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় । সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জুন প্রথম প্রহর রাত্রি অনুমান দেড়টা নাগাদ তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় মীর হোসেনের স্ত্রী বিলকিস  বেগম বাদী হয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জরিত থাকার সন্দেহে বগুড়ার আদমদঘিী উপজেলার প্রান্নাতপুর গ্রামের বাবু আলীর ছেলে ও রাণীনগর থানা থানা সেচ্ছাসেবক দল নেতা বেলাল হোসেন (২৮), রাণীনগর বাজারের জনৈক বাবু (৩৫),ত্রিমোহনি গ্রামের ইব্রাহিম সাহার ছেলে নোমান (৩৫) ও বাহাদুর পুর গ্রামের আলমগীর মেম্বার (৪২) কে সন্দেহভাজন হিসেবে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার প্রেক্ষিতে থানাপুলিশ থানা সেচ্ছাসেবক দল নেতা বেলাল হোসেন (২৮) কে ওই দিনই গ্রেফতার করেন। এছাড়া থানাপুলিশ ওই মামলায় যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন (৩৫),যুবলীগ নেতা শেরেকুল ইসলাম (৩৬) ও রাজাপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার বেলাল হোসেন (৪৮)কে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও মামলার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় অবশেষে মামলাটি গত দেড়মাস আগে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি সিআইডি হাতে নিলে দেড়মাসেও কাউকে গ্রেফতার বা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি ।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী ও মীর হোসেনের স্ত্রী বিলকিস বেগম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, মামলাটির অগ্রগতি বলতে তেমন কোন লক্ষন বুঝতে পারছিনা। সিআইড অফিসার দু’বার আমাদের বাড়ীতে এসেছিলনে এবং নওগাঁ তাদের কার্যালয়ে দেখা করতে বলেছিলেন। এর পর থেকে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, স্থানীয় ভাবে টাকা পয়সা লেদনেকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীকে হত্যার জন্য কয়েকবার হুমকি দিয়েছিল সন্দেহভাজন আসামীরা। এছাড়াও খট্রেশ্বর গ্রামের জনৈক সুবল চন্দ্রকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে দিয়েছিলেন,কিন্তু সুবল চন্দ্র টাকা না দেয়ায় বাড়ীর মাথালুকানোর স্থান টুকু বিক্রি করে ব্যাংক ঋন শোধ করতে হয়েছে।

মীর হোসেনের ছোট ভাই লিটন ও ফরিদ হোসেন জানান, মামলাটির সুষ্ঠু বিচার হবে বা বিচার পাবো এম কোন আশা দেখতে পাচ্ছিনা। তাছাড়া ওই মামলার সন্দেহ ভাজন আসামীরা প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও তাদের এখনও পর্যন্ত পুলিশ কিম্বা সিআইডি গ্রেফতার করেনি।

স্ত্রী বিলকিস বেগম আরো জানান, আমাদের নিজস্ব কোন জমা জমি নেই । বর্তমানে আমার দেবর-ভাশুরের জায়গায় কোন রকমে মাথা গোঁজে দিন পার করছি। সংসার জীবনে তার দু’মেয়ে। বড় মেয়েকে গত ৩ বছর আগে সান্তাহার এলাকায় বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে মীম সদরে মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনীতে পড়া লেখা করছে। মেয়ের লেখা পড়া এবং সংসার চালাতে গিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে।

এব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর আবু সাইদ জানান, এখনো হত্যারহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি তবে খুব শিঘ্রই আমরা এঘটনার রহস্য উম্মচন করতে পারবো বলে আশাবাদি। এছাড়া সবগুলো বিষয় গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
স/শ