‘চারজনের লাশ চিনেছি-বোনের টা পারিনি’

শাহিনুল আশিক:


‘দুই ভাগ্নি সুমাইয়া-সাবিহা, ভাগ্নে ফয়সাল ও ভগ্নিপতি (ছোটবোনের স্বামী) ফুল মিয়াকে চিনতে পেরেছি। আমার বোন নাজমা বেগমকে চিনতে পারিনি।’ শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে পাঁচটি মরদেহ গ্রহণের পরে এভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত নাজমা বেগমের ভাই নূর মহাম্মদ।


                               কাটাখালীতে বাস ও মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় নিহতের স্বজনের আহাজারি-ছবি সিল্কসিটি ।

এর আগে শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে নগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালীতে একটি বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে এক হৃদয় বিতারক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ঘটনাস্থলেই ১১ জন পুড়ে মারা গেছে। পরে রামেক হাসপাতালে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়।

নূর মহাম্মদ দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকেই রামেক হাসপাতালে ছিলেন। তবে সবার মরদেহ শনাক্ত করতে পারলেও বোন নাজমাকে শনাক্ত করতে পারেনি। তাই দিয়েছেন ব্লাডও (রক্ত)।

তিনি আরও বলেন, ‘বোনের কাপড়, ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগের ভেতরে থাকা টাকা দেখে আন্দাজ (শনাক্ত) করতে পেরেছি। এটা আমার বোন নাজমা। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। তবুও পাঁচজনের মরদেহ নিয়েছি। পরীক্ষার জন্য আমার ব্লাডও নিয়েছে চিকিৎসক।’

মরদেহ নিতে আসা নিহত শামসুন্নাহার ও কামরুন্নাহারের ভাতিজার স্ত্রী মোসা. চম্পা বেগম বলেন- ‘তাদের মধ্যে দুই-একজন ছাড়া কেউ কখনও রাজশাহীতে আসেনি। শিক্ষানগরী দেখার স্বাদ থেকে তারা শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভোরে মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা দেয়- পীরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে। পথে নাটোরে যাত্রা বিরতির পরে আবার রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা।’

তিনি আরও বলেন- ‘রাজশাহী স্বপ্নের শহর ছিলো তাদের কাছে। দেখার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো তাদের। সেই শহরে ঢোকার আগেই মৃত্যু হলো তাদের।’

দুর্ঘটনার পরে কাটাখালী থানার সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে- বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পরে বাসটি সড়কের দক্ষিণে নেমে যায়। আর মাইক্রোবাসটি সড়কের উপরে সামনের অংশে আগুন দেখা যায়। তার তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে পেছন থেকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাইক্রোবাসে। এর আগে দুর্ঘটনার সময় মাইক্রোবাস থেকে শিশুসহ সাতজন ছিটকে পড়ে। আর মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জনই পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

স/আ