চাকরি ছাড়লেন সিটিসেলের ৩ শতাধিক কর্মী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এক মাসের ব্যবধানে সিটিসেলের ৩ শতাধিক কর্মী চাকরি ছেড়েছেন।

ডিসেম্বরের শুরু হতে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অপারেটির স্থায়ী কর্মীদের মধ্যে আড়াই শতাধিক এবং অস্থায়ী কর্মীদের ৭০ জন্য চাকরি ছেড়েছেন।

অপারেটরটির উধ্বর্তন পর্যায়ের একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, চাকরি না ছেড়ে তাদের উপায় নেই। প্রথমত, চলতি বছরের নভেম্বরের পর হতে তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, চাকরি ছাড়লে এখন বকেয়া বেতনভাতাসহ গ্রাচুয়িটি দেয়া হচ্ছে এবং তৃতীয়ত, অপারেটরটি কার্যত অচল ও এখানে ক্যারিয়ারের কোনো ভবিষ্যত নেই।

গত ২৮ নভেম্বর সিঙ্গাপুর হতে এক স্কাইপে কলে কর্মীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্যাসেফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সিটিসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল মোর্শেদ।

বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, ওই আলোচনায় ফয়সাল মোর্শেদ কর্মীদের নভেম্বরের পরে কোনো দায়-দায়িত্ব না নেয়ার কথা জানিয়ে দেন। কর্মীদের বকেয়া পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেই অপারেটরটির ভবিষ্যত নিয়ে অনিয়শ্চতার কথা প্রকাশ করেন।

এদিকে সিটিসেল এমডির প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী কর্মীরা কয়েক কিস্তিতে বকেয়া বেতনভাতা পেয়েছেন।

ডিসেম্বরের শুরুতে প্রথম দফায় বকেয়া ২ মাসের বেতন পান সিটিসেলের স্থায়ী কর্মীরা। আর ডিসেম্বরের ২২ তারিখ সময়ে অনেকে পান বাকী ৩ মাসের বকেয়া বেতন, দুই ঈদের বোনাস, রিক্রিয়েশন লিভের ভাতাসহ বিভিন্ন পাওনা। এর মধ্যে যারা পাননি তারাও চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে বকেয়া পেয়ে যাবেন কর্মীদের জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের গ্রাচুয়িটি দেয়া প্রতিশ্রুতিতে স্থায়ী কর্মীদের অধিকাংশ চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। যেসব কর্মীর গ্রাচুয়িটি প্রাপ্য হয়নি তাদের কেউ কেউ নতুন চাকরি না হওয়া পর্যন্ত নামে চাকরিতে রয়েছেন।

এছাড়া অস্থায়ী আউটসোর্স করা কর্মীদের মধ্যে ই-জোনের ৭০ জন পাওনা পরিশোধের শর্তে চাকরি ছেড়েছেন। সিটিসেলের সঙ্গে ই-জোনের চুক্তির মেয়ার শেষ হবার এক মাস আগেই এসব কর্মীদের বিদায় দেয়া হয়েছে।

এই কর্মীদের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ২টি স্যালারি এবং ২৯ জানুয়ারিতে ৩ মাসের স্যালারি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া রিক্রিয়েশন লিভ ও একটি ঈদ বোনাসও তারা পাবেন।

বকেয়ার দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছিলেন কর্মীরা।

বকেয়া পরিশোধের দাবিতে কর্মীদের আন্দোলনে গত ২২ ও ২৩ নভেম্বর অবস্থান কর্মসূচীতে সিইও মেহবুব চৌধুরী, অপারেটরটির চিফ টেকনিক্যাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহফুজুর রহমান, চিফ সিএমও ও ভারপ্রাপ্ত চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার তারিকুল হাসান এবং হেড অব স্ট্রাটেজিক এনালাইসিস উইং জিয়াউর রহমান গুলশানস্থ প্রধান কার্যালয়ে আটকা পড়েন।

প্রায় ২৪ ঘন্টা আটকা থাকার পর সিইও মেহবুব চৌধুরী অপারেটরটির চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান কর্মীদের বকেয়া ও পাওনা পরিশোধে সরাসরি কথা বলবেন এমন আশ্বাস দিয়ে কার্যালয় ছাড়েন।

সিইও’র আশ্বাস অনুয়ায়ী চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান কথা না বললেও তার ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ সিঙ্গাপুর হতে স্কাইপেতে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

পাওনা আদায়ে কর্মীরা চলতি বছরের আগস্ট হতে মানবন্ধন, কার্যালয়ে পোস্টারিং, সংবাদ সম্মেলন, অবস্থান কর্মসূচীসহ নানা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন।

গত ১৭ আগস্ট কর্মীরা বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণসহ সাত দফা দাবিতে মানবন্ধনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের বাঁচাতে আকুতি জানায়।

নানা ঘটনার মধ্যে ২০ অক্টোবর বিটিআরসি সিটিসেলের স্পেকট্রাম বরাদ্দ স্থগিত করে দিলে সিটিসেল সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।

আপিল বিভাগ বিটিআরসিকে স্পেকট্রাম খুলে দেয়ার আদেশ দিয়ে সিটিসেলকে আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।

সিটিসেলের কাছ থেকে বিটিআরসি মোট ৪৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পাওনার হিসাব দিয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এনবিআর ও বিটিআরসিকে প্রথমে ১৪৪ কোটি টাকা ও পরে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটিসেল।

সূত্র: টেকশহর