চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন: নৌকা-ধানের শীষের লড়াই, তোতার কী প্রভাব?

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

আগামী ১৪ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে নৌকা ও ধানের শীষের ভোট যুদ্ধ। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। সর্বত্র বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। চায়ের দোকানগুলোতে চলছে প্রধান দুই দলের বাকযুদ্ধ। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, তার সঙ্গে নির্বাচনী সমীকরন পাল্টাতে শুরু করেছে।

ভোটারদের সাথে কথা বলে নৌকা ও ধানের শীষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। তবে মাঠে থাকা আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউর রহমান তোতা খুব সুবিধা করতে পারবে না এমন আভাসই মিলছে। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রুহুল আমিন ১ লাখ ৭ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জামায়াতের রফিকুল ইসলাম পান ৯১ হাজার ৮৫ ভোট। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে জামায়াতের প্রার্থী মোকলেসুর রহমান ১ লাখ ১১ হাজার ৫৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম এ্যাড. সামসুল হক ৬৭ হাজার ৬৯০ ভোট, বিএনপির প্রার্থী তসিকুল ইসলাম তসি পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৫১ ভোট।

উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা। নির্বাচনের ভোট যুদ্ধে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিরতিহীন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রার্থীর নানা বিষয় উঠে আসছে ভোটারদের কথোপকথনে। নির্বাচনে দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ, উন্নয়ন ও সাংগঠনিক গতিশীলতা কাজে লাগিয়ে এবারও জয়লাভ করবে আওয়ামী লীগ। ধানের শীষ প্রতীকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে জয়লাভের সম্ভাবনা দেখছেন বিএনপি।

অন্যদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এদিকে, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউর রহমান তোতাকে নিয়ে খানিকটা বেকায়দায় আওয়ামীলীগ। এই নিয়ে দলীয় কর্মীদের তার পক্ষে কাজ না করার নির্দেশনা দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে দলটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদ জানান, জিয়াউর রহমান তোতার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরাও মাঠে নেই। বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। নৌকার পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি আশাকরি জয়ী হতে পারব।

এ বিষয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে আমরা অবগত। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, গত ১১ বছরে চরাঞ্চলসহ সর্বত্রই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা স্বাধীনতার পর কোন সরকারই করেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নিত করণ, শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণ, রেলের উন্নয়ন, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রায় ৩০টি স্কুল কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসার উর্দ্ধমুখী ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ উন্নয়ন দিয়েই সাধারণ ভোটারদের মন জয় করেছে আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. তসিকুল ইসলাম তসি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তিসহ চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয়ী হবো।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোঃ জিয়াউর রহমান তোতা জানান, নেতাকর্মীরা চাই আমি ভোট করি, তাদের কারনেই ভোটের মাঠে।

এদিকে নির্বাচনে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থী থাকলেও মাঠে এগিয়ে আছে, তালা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ সোহরাব আলী, বই প্রতীকের প্রার্থী নাহিদ ইসলাম রাজন ও উড়োজাহাজ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ প্রার্থী থাকলেও এগিয়ে রয়েছে হাঁস প্রতীকের প্রার্থী মোসাঃ শরিফা খাতুন, ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী মোসাঃ শরীফা খাতুন জেইজী ও কলস প্রতীকের প্রার্থী নাসরিন আখতার।

স/শা