চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর ৫ কোটি টাকার কাজ ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপনে সমঝোতার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাঁচ কোটি টাকার কাজ কয়েকজন ঠিকাদারের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ ঠিকাদারদের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্টেমিটর ও সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে দরপত্রের গোপন প্রাক্কলিত মূল্য হাতিয়ে নিয়েছে প্রভাবশালী ঠিকাদার চক্রটি। এতে তারা ছাড়া অন্য কোনো ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই।

এ ঘটনায় বুধবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ ঠিকাদাররা।

বিক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় সোলারচালিত টিউবওয়েল ও সাবমার্সেবল পাম্প স্থাপন এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস নির্মাণের জন্য ছয়টি গ্রুপে পাঁচ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার ছিল ওই দরপত্রের শিডিউল কেনার শেষ দিন। কিন্তু শিডিউল কিনতে এসে ঠিকাদাররা জানতে পারেন দুই-তিন দিন আগেই ছয়টি গ্রুপের কাজ একটি প্রভাবশালী চক্রকে ভাগ করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা ঠিকাদার সমিতির নেতারাসহ সাধারণ ঠিকাদাররা বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের হুজরাপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। জেলা ঠিকাদার সমিতির সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব অভিযোগ করেন, ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কোনো ঠিকাদারকে প্রাক্কলিত মূল্য জানানোর সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারি ক্রয় নীতিমালা ভঙ্গ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক কুমার সরকার, স্টেমিটর বাবলু হোসেন ও সদর উপজেলার
উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল জাব্বার তাঁদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজটি পাইয়ে দিতে দরপত্রের গোপন প্রাক্কলিত মূল্য জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁরাই কাজগুলো পেয়ে যাবেন।

ঠিকাদার সমিতির কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আশিকুজ্জামান রনি অভিযোগ করেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে কাজগুলো ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে নওগাঁর দেওয়ান আলী আকবর, রাজশাহীর সারা ট্রেডার্স এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেসার্স শাহ আলমগীর ট্রেডার্স, শফিক ট্রেডার্স ও শামীম ট্রেডার্স নামের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, ‘দরপত্রের গোপন প্রাক্কলিত মূল্য তাদের জানিয়ে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের কর্মকর্তারা।’ এ অবস্থায় এ দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি জানান তিনি।

ঠিকাদার ওহেদুন নবী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটিই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছে। আর জনস্বাস্থ্যের সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল জাব্বার তাদের সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্টেমিটর বাবলু হোসেন জানান, প্রাক্কলিত ব্যয়ের মূল্য কাউকে জানানোর নিয়ম নেই। তাই কাউকে তা জানানোও হয়নি। ঠিকাদাররা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক কুমার সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য বুধবার দুপুরে তাঁর অফিসে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

স/শ