চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯০ ভাগ মানুষের মাস্ক ব্যবহারে অনীহা

নিজস্ব প্রতিবেদক,চাঁপাইনবাবগঞ্জ:  করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সাধারণ মানুষ যাতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যাপারে সরকার কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছে।

কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদাসীনতাই ফুটে উঠছে। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষ তা মানছেন না। মাস্ক ব্যবহারে আগের মতোই উদাসীন ভাব দেখা যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস পর্যায়েও দেখা যাচ্ছে মাস্ক ব্যবহারে ঢিলেমি। ‘নো মাস্ক-নো সার্ভিস’ এবং নো মাস্ক-নো সেল কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুর দিন থেকেই দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কিন্তু নিরাপদ সামাজিক দূরত্বসহ কোনো স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না। শুক্রবার ও গত বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, অনেক কর্মকর্তা মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা এবং দায়িত্ব পালন করছেন। রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিপণিবিতানগুলোতে নেই মাস্ক ব্যবহারে বাধ্যতামূলক কোনো ব্যবস্থা। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক ব্যবহার না করে চলাচল করছেন। দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও ছিল বেশ। কিন্তু করোনার মহামারী চলছে তা মানুষের চলাচল দেখে বোঝার উপায় ছিল না।

এছাড়া সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেশির ভাগই মাস্ক ছাড়া বেচাকেনা করছিলেন। সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মধ্যেই করোনা নিয়ে সচেতনতা চোখে পড়েনি। সকাল থেকে রাত অবধি উপজেলার বিভিন্ন খাবার হোটেলে মাস্ক ছাড়াই অনায়াসে ভোক্তারা প্রবেশ করছেন। হোটেলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি যেন উপেক্ষিত, এমনকি হোটেল মালিকদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের ভোক্তাদের মাস্ক ব্যবহারে কোনো উপদেশও দিতে দেখা যায়নি। মালিকরা বলছেন, মাস্ক পড়ে থাকা কষ্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই বলতে গেলে একেবারে মাস্ক ব্যবহার নেই।

অনেকেই বলছেন, এখন থেকে সাবধানতা অবলম্বন না করলে করোনার ভয়াবহতা আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শীত শুরুর প্রাক্কালে প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন। শতকরা ৯০ জন মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। বরং নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে গাদাগাদিভাবে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এমনকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানের আড্ডা, রাস্তার ধারে বসে গল্পগুজব সবই ছিল, ছিল না দূরত্ববিধি মানার বালাই। স্বাস্থ্য বিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে থেকে জেলা শহরে মাস্ক ব্যবহারে কোনো কড়াকড়ি লক্ষ্য করা যায়নি।

অনেকেই বলছেন এ মুহূর্তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। মাস্ক পরায় কড়াকড়ির পাশাপাশি নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই। এদিকে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকেরই মাস্ক না পরার প্রবণতা বেশি, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালাতে হবে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে তারপর ব্যবহারে বাধ্য করার পথে এগোনো উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই। তা না হলে অভিযান চালিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

শিবগঞ্জ বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন শাকসবজি বিক্রেতারা জানান, দেশে করোনাভাইরাসের আক্রমণ অনেকটা কমেছে। তবে শুনছি শীতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তবে নিয়ম কি আর এত মেনে চলা যায়। তবে মাস্ক না পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। এদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাকিউল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। যত দিন পর্যন্ত মানুষ সচেতন না হবে, তত দিন এ অভিযান চলবে। সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, জেলার ১০ ভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে। তবে মাস্ক ব্যবহারে কঠোর হতে জেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করেছে।

স/রি