চাঁপাইনবাবগঞ্জে পা ছাড়া শিশুর জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পা ছাড়া এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে। শিশুটির শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক। কিন্তু উরু থেকে নিচ পর্যন্ত দুটি পায়ের কোনো অংশই নেই। জন্মের পর বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনই সুস্থ রয়েছে। পা ছাড়া জন্ম নেয়া শিশুটিকে একনজর দেখতে ভিড় করছেন প্রতিবেশী নারী-পুরুষরা। জেলা সদর পৌরসভার মিল্কি এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আতিকুল ইসলাম ও জুই খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছে শিশুটি।

শিশুটির মা, পরিবার ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৬টায় প্রসবব্যথা শুরু হলে জুইয়ের পরিবারের লোকজন তাকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে নরমাল ডেলিভারিতে দুই পা ছাড়াই জন্ম নেয় শিশুটি। জন্মের পর হাসপাতাল থেকে সকাল ৯টার দিকে মা ও শিশুকে ছাড়পত্র না দিয়েই বাড়ি পাঠিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়িতে আসার পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মা ও শিশুকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে শনিবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে মা ও শিশু। বাড়িতে আসার পর থেকে আশপাশের এলাকা থেকে শিশুটিকে দেখতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা। তবে অভাবের সংসারে এমন শিশু জন্মের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত শিশুটির পরিবার।

তারা বলছেন, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বাবার সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এমন শিশুর বেড়ে ওঠা অনিশ্চিত। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা শঙ্কা তাদের মনে। তাদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

শিশুটির মা জুই খাতুন বলেন, জন্মের আগে পেটে ৭ মাস বয়সে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার সময় ডাক্তার বলেছিল বাচ্চার সাইজ ছোট আছে। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধও খেয়েছিলাম। তারা বলেছিলেন, ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে পা না থাকার বিষয়টি জন্মের পরে জানতে পারলাম। বাচ্চা যখন জন্ম নিল তখন দুই পা সম্পূর্ণ না থাকার বিষয়টি জানতে পেরে দেখি আমার মা-বাবাসহ পরিবারের সকলেই কান্নাকাটি করছে।

তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কীভাবে এমন ছেলে লালন-পালন করবো জানি না। ছেলের চোখ, মুখ, নাক, কান, মাথা সব কিছুই আর পাঁচটা ছেলের মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু পায়ের কোনো অংশই নেই। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন, সে যেন ভালো থাকে।

শিশুটির নানা সারিউল ইসলাম জুয়েল জানান, শুক্রবার বাচ্চা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র না দিয়েই বিদায় করে দেয়। তবে বিকেলে আবারও গেলে শনিবার ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় পাঠিয়েছে। ছেলেটিকে একনজর দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন এসে ভিড় করছে। বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনই সুস্থ রয়েছে।

প্রতিবেশী কাইমুল ইসলাম শিশুটিকে দেখতে এসেছেন। তিনি জানান, কালকেই শুনেছিলাম পা ছাড়া বাচ্চা হয়েছে। তাই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম পা ছাড়া ছেলেটার ওপরের দিক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। এমন ঘটনা কখনও দেখিনি।

আরেক প্রতিবেশী লাইলী বেগম বলেন, মহান আল্লাহ খুব সুন্দর করে ছেলেটিকে তৈরি করেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দুটি পা ছাড়াই জন্ম নিয়েছে বাচ্চাটি। পরিবারটি খুবই গরিব, অসহায়। তাদের জন্য এমন ছেলেকে লালন-পালন করা খুবই কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই বিত্তবানদের পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।

পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মইদুল ইসলাম জানান, পরিবারটি খুবই অসহায়। তাদের পরিবারেই এমন একটি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের মনে অনেক দুঃচিন্তা কাজ করছে। সকলকে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, এর আগেও বাংলাদেশে এমন বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার পা না থাকলেও শরীরের অন্য সব অঙ্গ ঠিক রয়েছে। পা ছাড়াই বাচ্চাটি তার জীবন-যাপন করতে পারবে। কারণ আগে এমন শিশু জন্ম নিলে তাদের বেড়ে ওঠার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে বর্তমান সরকার এমন শিশুদের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করছে।

এমন শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগে এমন শিশুদের নিয়ে তেমন কাজ হতো না। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের নিয়ে নানা পরিকল্পনা করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল এসব শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন। তাদেরকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্বাভাবিক জীবন উপহার দিচ্ছে সরকার।

স/রি