চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমানতের কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘বিধবা নারী সংস্থা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
মুনাফার আশায় ও নানা প্রলোভনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে টাকা জমিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিধবা নারী, প্রতিবন্ধী ও অসহায় দরিদ্র নারীরা। গত ৩ বছরে যা দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকার উপর। আর সদস্যদের সেই কষ্টের টাকা নিয়ে লাপাত্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি মহিলা সংস্থা। সবকিছু হারিয়ে এখন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ৰতিগ্রস্তরা। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দেন প্রশাসন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংস্থার সভানেত্রী।
অভিযোগে প্রকাশ হয়, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলার বারঘরিয়া এলাকায় মহিলাদের নিয়ে ‘বিধবা নারী সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করেন মোসা: হিরামতি। এরপর অসহায় বিধবা, প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র মহিলাদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভনের প্রতিশ্র্বতি দিয়ে শুরু হয় টাকা নেয়া। বাড়তে থাকে সঞ্চয় ও সদস্য। ফুলে ফেঁপে উঠে আমানতের পরিমাণ। তবে গত এক বছর ধরে হঠাৎ করেই সদস্যদের সঞ্চয়ের অর্থ নেয়া বন্ধ করে দেয় সমিতি। শুধু তাই নয়, সদস্যদের দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্র্বতির কোন কিছুই কর্তৃপৰ দেয় নি। গুটিয়ে নেয়া হয়েছে প্রধান কার্যালয়ও।
সংস্থার প্রতারিত সদস্য শাহানা বেগম, আসমা বেগম, সুরতান বেগম জানান, গত এক বছর যাবত সংস্থার কর্মকর্তাদের নাগাল না পেয়ে প্রতিদিনই মাঠকর্মিদের কাছে ভিড় করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি সংস্থার সভানেত্রী মোসা: হিরামতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। শেষ মেষ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে এখন পর্যন্ত কোন ফল পাননি এসব হত দরিদ্র নারী।
এদিকে সংস্থার মাঠকর্মি রেহেনা বেগম এবং জান্নাতুন খাতুন অভিযোগ করেন সদস্যদের মাসিক সঞ্চয়ের টাকা ম্যানেজারের মাধ্যমে তারা সভানেত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। এখন সভানেত্রীর কাছে সদস্যদের টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছেন।
তবে শাহবাজপুর শাখা ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান সদস্যদের টাকা ফেরতে ভূমিকা না রেখে সংস্থার সভানেত্রীর সাফাই গাইছেন এ অভিযোগ মাঠকর্মিদের। শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব বিধবা নারীদের টাকা আত্মসাত ও প্রতারণার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন।
এদিকে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আকতার সিল্কসিটি নিউজকে জানান, অসহায় মহিলাদের সঞ্চয় মনোভাবপন্ন করে তোলার জন্য সামান্য পরিমাণ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও মাসিক ৫০ টাকা করে নিয়ম বর্হিভূতভাবে টাকা উত্তোলন ও আত্মসাত করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিধবা নারী সংস্থার সভানেত্রী মোসা: হিরামতি জানান, সদস্য ও মাঠকর্মিদের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মূলত মাঠকর্মি ও শাখা ব্যবস্থাপকদের সমন্বয়হীনতাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সদস্যদের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পৰ থেকে গঠন করা হয় ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আর্থিক লেন-দেন সংক্রান্ত সংস্থার কোন ধরনের অনুমতি না থাকলেও সংস্থাটির সভানেত্রী শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলার সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।
তিনি আরো জানান, সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
স/শ