বুধবার , ৩ জুলাই ২০২৪ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলতি মাসেই ভয়াবহ রূপে ফিরছে ডেঙ্গু

Paris
জুলাই ৩, ২০২৪ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

দেশের ইতিহাসে গত বছর ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পার করেছে বাংলাদেশ। সোয়া ৩ লাখ মানুষ হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি ১ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে ২০২৩ সালে। এ বছরের গত ৬ মাসে ভাইরাসটির দাপট কিছুটা কম হলেও চলতি মাসের মাঝামাঝিতে পুরনো রূপে ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের বিস্তার বেশি ঘটছে ঢাকার বাইরের জেলা ও মহানগরীগুলোতে।মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৭৫১ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশই ঢাকার বাইরে। সবচেয়ে বেশি ৯৭৮ জন চট্টগ্রামে এবং বরিশালে ৪৯৪ জন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে উত্তর সিটিতে ৫৪৩ জন এবং দক্ষিণ সিটিতে ৭৮৮ জন। তবে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বেশি হলেও মৃত্যু বেশি হচ্ছে ঢাকায়। এ বছর মারা যাওয়া ৪৬ জনের ৩৩ জনই ঢাকার দুই সিটির বাসিন্দা। এর মধ্যে ২৮ জনই দক্ষিণ সিটিতে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, গত বছরের মতো এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ হবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি ডেঙ্গু বিস্তারেরৎ বড় কারণ হবে এবার। বিভিন্ন জায়গায় পানি জমবে, যার প্রভাব পড়বে ১৫ দিন পর।

রাজধানীতে ভর্তি রোগীর ৯০ শতাংশই ঢাকার: ডেঙ্গু চিকিৎসা সামাল দিতে গিয়ে প্রতিবছরই বেগ পেতে হয় মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে। গত বছর সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছে এ হাসপাতালে। তবে এবার এখন পর্যন্ত চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে দুজন ঢাকার বাইরের, বাকিরা সবাই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা। একই চিত্র পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালে। দায়িত্বরত নার্সরা জানান, এবার ৯০ শতাংশ রোগী আশপাশের এলাকা থেকে আসা। তাদের অধিকাংশই রাজধানী মান্ডা, বাসাবো, মানিকনগর, বনশ্রী, গোলাপবাগ, দক্ষিণ মুগদা ও মিরপুরের বাসিন্দা।

রাজধানীর মুগদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বর্ষা মনি। পাঁচ দিন ধরে জ্বর, প্রচ- বমি ও পাতলা পায়খানা নিয়েই পরীক্ষা দিয়ে আসছে। গত সোমবার পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। একদিন পরই শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে নেওয়া হয় মুগদা মেডিক্যালে। বর্ষার বড় বোন মনিষা জানান, ‘হঠাৎ করেই তীব্র জ্বর শুরু হয়। পরে বমি ও পাতলা পায়খানা হলে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাওয়ানো হয়। কিন্তু তারপরও অবস্থার উন্নতি হয়নি।’

ডেঙ্গু নিয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার চর ইউনিয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা মানছুরা আক্তার (২২)। গত ৯ দিন ধরে ভাইরাসটিতে ভুগছেন এই নারী। উপজেলা হাসপাতালে চার দিন চিকিৎসা নিয়েও উন্নতি না হওয়ায় পাঠানো হয় এ হাসপাতালে।

তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে এবারও খারাপ হবে সেটি আগেই উঠে এসেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা মাঠ পর্যায়ের গবেষণায়। গত ৮ মে অধিদপ্তরের প্রকাশিত সমীক্ষায় উঠে আসে, রাজধানী ঢাকার প্রায় ১৫ শতাংশ বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ও পিউপার লার্ভা রয়েছে।

ডিএসসিসির ভাষ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভুল তথ্য দিচ্ছে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দক্ষিণ সিটিতে বাস করা ৭৮৮ জন মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৮ জন। তবে এ তথ্যকে সম্পূর্ণ ভুল দাবি করে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির আমাদের সময়কে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন জাতির সামনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করছে। বাইরে রোগী মারা গেলে তাকে দক্ষিণের বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদে অধিদপ্তরকে গত ২৬ মে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত জবাব দেয়নি। তবে এ ধরনের চিঠির ব্যাপারে এখনো কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান।

দেরিতে আসায় ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যু: ডেঙ্গুতে মৌসুম শুরুর আগেই এত মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। কিন্তু রোগীরা শকে তথা সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে গেলে হাসপাতালে আসেন। এমন দেরিতে আসায় মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।’

 

 

সর্বশেষ - জাতীয়