চরিত্রবান ব্যক্তির জন্য সাত পুরস্কার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জুন্দুব ইবনে জুনাদাহ ও মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করবে তুমি যখন যেভাবেই থাকো না কেন। আর মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজ করবে। কেননা নেক কাজ মন্দকে মুছে ফেলে। আর মানুষের সঙ্গে ভাৃলা ব্যবহার করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষকে উত্তম চরিত্র অর্জনের মৌলিক তিনটি দিক বর্ণনা করেছেন। এসব গুণের মাধ্যমে মানুষ উত্তম চরিত্রের দীক্ষা লাভ করে। আর উত্তম চরিত্র উত্তম জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।

 

উত্তম চরিত্রের সাত পুরস্কার

কোরআন হাদিসে উত্তম চরিত্র অর্জন ও নৈতিক জীবনযাপনের বহু পুরস্কারের বিবরণ রয়েছে। এর কয়েকটি হলো—

১. উত্তম চরিত্র মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমল জান্নাতে প্রবেশের জন্য বেশি সহায়ক হবে? মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ভয় ও উত্তম চরিত্র।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

২. নেকের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে উত্তম চরিত্র

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিনে উত্তম চরিত্রের চেয়ে অন্য কিছু পাল্লায় বেশি ভারী হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০৩)

৩. ঈমানের পূর্ণতা আসে সচ্চরিত্রের মাধ্যমে

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈমানের হিসাবে সর্বোত্তম মুমিন সেই যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৪০২)

৪. উত্তম চরিত্র নবী (আ.)-এর অন্যতম মিশন

চারিত্রিক পূর্ণতা দানকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর অন্যতম নববী মিশন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি চারিত্রিক গুণাবলি পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৯৩৯)

৫. উত্তম চরিত্র উত্তম ইবাদতের সমতুল্য

উত্তম চরিত্রের দ্বারা মুমিন নিয়মিত রোজা রাখা ও তাহাজ্জুদ আদায় করার মর‌্যাদা অর্জন করবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন উত্তম চরিত্রের দ্বারা স্থায়ী রোজাদার ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মর‌্যাদা অর্জন করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

৬. সর্বোত্তম জান্নাতে ঘর লাভ

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুসংবাদ হলো—

‘যে তার চরিত্র সুন্দর করবে আমি সর্বোত্তম জান্নাতে তার জন্য ঘরের জামিনদার হব।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০২)

৭. মহানবী (সা.)-এর নৈকট্য লাভ

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কিয়ামতের দিনে তোমাদের মধ্যে আমার বেশি প্রিয় এবং আমার মজলিসের বেশি নিকটবর্তী তারাই থাকবে যারা তোমাদের ভেতর সর্বোত্তম চরিত্রবান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০১৮)

 

উত্তম চরিত্রের কয়েকটি নিদর্শন

আলোচ্য হাদিসে বর্ণিত তিনটি বিষয় ছাড়াও কোরআন ও হাদিসে উত্তম চরিত্রের আরো কিছু দিক বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আল্লাহ বলেছেন, ‘…যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে; যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের বাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৪)

হাসান (রা.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র হচ্ছে বদান্যতা, দানশীলতা ও সহনশীলতা।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১৯/৮১)। আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) বলেন, ‘উত্তম চরিত্র হলো চেহারার প্রফুল্লতা, সৎপথে দান করা ও কষ্ট প্রদান থেকে বিরত থাকা।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, প্রাগুক্ত)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সিসি)

বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।