‘ঘুষ দেওয়ার দরকার নেই, সরকারকে কর দিন’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:  ‘দীর্ঘ সময় ধরে কর দিচ্ছি। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদেরও আয়কর দিতে উদ্বুদ্ধ করি। আমি সবসময় বলি- ঘুষ দেওয়ার দরকার নেই, সরকারকে কর দিন।’ কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা হয়ে কর বাহাদুর নির্বাচিত হওয়ার পর অন্যান্যদের উদ্দেশে এসব কথা বলেছেন অধ্যক্ষ আফজল খান।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বোচ্চ আয়কর প্রদান করে কর বাহাদুর হওয়ার অনুভূতি এবং অন্যান্যদের আয়কর প্রদানে উৎসাহিত করছেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আফজাল খান বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছি। বর্তমানে আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও ছেলের বউসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য দীর্ঘ সময় ধরে আয়কর দিয়ে আসছে। আশা করি আমার মৃত্যুর পরও তারা সরকারের কোষাগারে আয়কর প্রদান করবেন।’

কুমিল্লা কর অঞ্চলের কমিশনার সামস্ উদ্দিন আহমেদ জানান, কুমিল্লায় ১৫ হাজার ৪৪৬ জন করদাতার মধ্যে কর বাহাদুর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যক্ষ আফজল খান। তিনি দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে সরকারের কোষাগারে কর দিচ্ছেন। শুধু অধ্যক্ষ আফজাল খান নন, তার পরিবারে দীর্ঘ মেয়াদী করদাতা রয়েছেন আরও পাঁচ জন।’

তিনি বলেন, ‘কর বাহাদুর পরিবারের সদস্য অধ্যক্ষ আফজল খানের স্ত্রী নারগিস সুলতানা দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে কর দিচ্ছেন, বড় ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ১৮ বছর, মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ৯ বছর ও ছোট ছেলে আজম খান ৯ বছর ধরে কর দিচ্ছেন। ইমরান খান এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এবং কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, তার স্ত্রী সৈয়দা আফিয়া আক্তার তিন বছর সময় ধরে আয়কর প্রদান করছেন।’

কুমিল্লা জেলার কর বাহাদুর হিসেবে নির্বাচিত অধ্যক্ষ আফজল খান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি জেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক। এছাড়া তিনি কুমিল্লা-৬ আসনে সংসদ নির্বাচন এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।’

 

কর বাহাদুর পরিবারের সদস্য আফজাল খানের স্ত্রী নারগিস সুলতানা কুমিল্লা নগরীর মডার্ন স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। বর্তমানে তিনি নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছেন।

কর বাহাদুরের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। বর্তমানে তিনি নগরীর মডার্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছেন।

বড় ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান একজন রাজনীতিবিদ এবং কুমিল্লার ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এবং কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি।

কর বাহাদুরের আরেক ছেলে ডা. আজম খান। তিনি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পরিচিত। ইমরান খানের স্ত্রী সৈয়দা আফিয়া আক্তারও কর বাহাদুরের পরিবারের আয়কর দাতা।

এছাড়াও কুমিল্লা কর অঞ্চল সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কুমিল্লা জেলায় ১৫ হাজার ৪৪৬ জন করদাতা ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ১৬০ টাকা কর দিয়েছেন। ১৫ হাজার ৪৪৬ জন করদাতার মধ্যে ৩৪৪ জন নতুন করদাতা রয়েছেন। মেলায় নতুন ইটিআইএন নিয়েছেন তারা এবং আয়কর রিটার্ন দাখিল করে করদাতা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।

কর দিতে মানুষকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে কুমিল্লা কর অঞ্চলের কমিশনার সামস্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছর কর ভবনে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়। দুটি ব্যাংকের অস্থায়ী বুথ স্থাপনের মাধ্যমে করদাতাদের কর জমা প্রদান সহজ করা হয়। কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে মেলা প্রাঙ্গণে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা ও ডায়াবেটিক পরীক্ষা করা হয়। সঞ্চয় অধিদফতরের বুথ হতে সঞ্চয়পত্র সম্পর্কিত সেবা, কাস্টমস্ এক্সাইজ এবং ভ্যাট বুথ হতে ভ্যাট ও ডিউটি বিষয়ক সেবা প্রদান করা হয়।’

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন