ঘাড় ব্যথায় ফিজিওথেরাপি

ফিজিও ইসরাত জাহান রিনা:

ঘাড় ব্যথা হল একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। অধিকাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় ঘাড় ব্যথা অনুভব করে থাকে। বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যান্সেটের তথ্যমতে বিশ্বব্যাপী ৩৩ কোটি মানুষ ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। ঘাড় ব্যাথা মৃদু অস্বস্তি থেকে শুরু করে অত্যন্ত তীব্র পর্যায়ের হতে পারে।

আমাদের জীবনযাপনের যান্ত্রিকতা বৃদ্ধি ও শারীরিক ক্রীয়াকলাপে অংশগ্রহন কমে যাওয়ায় ঘাড় ব্যাথাসহ আরো অন্যান্য মাংসপেশী –অস্থী-অস্থিসন্ধি সম্পর্কিত (মাস্কুলোস্কেলেটাল) সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।
দীর্ঘমেয়াদী ঘাড় ব্যথা (ক্রনিক নেক পেইন) একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যথার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ না করে এর উৎস নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা ও প্রতিকারই দিতে পারে ঘাড় ব্যথার স্থায়ী সমাধান।

কী কী কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে?
ঘাড় ব্যথার কারণসমূহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। ১. মেকানিক্যাল ২. প্যাথলজিক্যাল। মেকানিক্যাল কারণ হতে পারে মেরুদণ্ডের আঘাত, মাংসপেশীতে টান লাগা, মাংসপেশীর অতিরিক্ত ব্যবহার বা ছিঁড়ে যাওয়া, মাংসপেশি দুর্বলতা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক দেহ ভঙ্গিতে ঘুমানো/বসে থাকা/কাজ করা, সারভাইক্যাল ডিক্সপ্রলাপ্স/হারনিয়েশান ইত্যাদি। প্যাথলজিক্যাল কারণ হতে পারে টিউমার, টিবি, হাড়ের ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস) ইত্যাদি। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক/শারীরিক চাপ, অপরিমিত ঘুম/বিশ্রাম, অপর্যাপ্ত পানি পান (ডিহাইড্রেশান), দীর্ঘ সময় সামনের দিকে ঝুকে কাজ (মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার) ইত্যাদি বিষয় ঘাড় ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।

ঘাড় ব্যথার অন্যান্য উপসর্গ: 
ঘাড়ের সমস্যার কারনে ঘাড় ছাড়াও কাঁধ, পাখনা, বাহু, হাত, পিঠে অনুভূত হতে পারে (রেফারড পেইন)। ঘাড়ের স্নায়ু (নার্ভের) চাপের কারনে ঝিঁঝিঁ, অবশভাব , শিরশির/কনকন অনুভুতি, মাংশপেশী শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথার সাথে কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়াও (ফ্রোজেন শোল্ডার) হতে পারে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কিভাবে ঘাড় ব্যথা ভালো করে?
ঘাড় ব্যথা বিশেষত মেকানিক্যাল নেক পেইন জন্য ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা। ফিজিওথেরাপি একটি সতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। একজন বিপিটি ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর শারীরিক অবস্থা নিরূপণ (ফিজিক্যাল এ্যসেসমেন্ট) করে ব্যথার উৎস নির্ণয় করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন।

ঘাড় ব্যথার জন্য ম্যানুয়াল থেরাপী যেমন মোবিলাইজেশন, ম্যানিপুলেশন, সফট টিস্যু থেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসা দ্রুত ব্যথার উপশম করে। বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে মাংসপেশিকে নরম বা প্রসারিত করা, দুর্বল বা অসার মাংসপেশিকে শক্তিশালী করা, অস্থিসন্ধির সচলতা বৃদ্ধি করা হয়। এর পাশাপাশি ইলেক্ট্রো থেরাপি যেমন স্যার ভাই কেল ট্রাকশন, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন , ইনফ্রা রেড রে ইত্যাদি চিকিৎসাও ঘাড় ব্যথার চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়। যেহেতু ঘাড় শরীরের একটি সংবেদনশীল অংশ, এর ফিজিওথেরাপি অবশ্যই একজন দক্ষ ও স্বীকৃত ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করতে হবে।

আমরা সবাই জানি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই যেসব কারণে ঘাড় ব্যথা হয়, দৈনন্দিন জীবনে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি বাড়িতে নিয়মিত ব্যায়াম করা, সঠিক নিয়মে ঘুমানো/বসা/কাজ করা, মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকা, খাদ্যাভাস পরিবর্তন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম/ঘুম, পর্যাপ্ত পানি পান ইত্যাদি নিয়ম মেনে চলতে পারলে ঘাড় ব্যথা সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।

লেখক: ফিজিও ইসরাত জাহান ( রিনা )এম পি এইচ ,বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বি পি টি, রাবি।

স্বত্বাধিকারী: ফিজিও কেয়ার ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও সদস্য রাজশাহী ফিজিওথেরাপি পেশাজীবী পরিষদ।

এএইচ/এস