ঘরের বাইরে আছি বলে মনেই হবে না

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তাঁর কোলের ওপর বিশালকায় এক সামুদ্রিক মাছ। ব্যাকগ্রাউন্ডে নীল সমুদ্র। আর ক্যাটামারানে দাঁড় করিয়ে রাখা বড়শি দেখে বুঝে নিতে সমস্যা হয় না যে প্রায়ই মাছ ধরার জন্য দূর সমুদ্রে চলে যান রাসেল ডমিঙ্গো। হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর প্রফাইল পিকচারই বুঝিয়ে দেয় ভীষণ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তিনি। এবার নতুন চাকরি করতেও পাড়ি দিচ্ছেন সাত সমুদ্র। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের সাবেক এই হেড কোচ এবার একই ভূমিকায় আসছেন বাংলাদেশেও। গতকাল দুপুরে সেটিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর থেকে যোগাযোগ চলছিল তাঁর সঙ্গে। নতুন দায়িত্বের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলতে চাওয়ায় আপত্তি করলেন না। তবে কী একটা ব্যস্ততার কথা বলে কয়েকবার এক ঘণ্টা করে সময় চাওয়া ডমিঙ্গো অবশেষে সাক্ষাৎকার দিলেন সন্ধ্যায়। মাসুদ পারভেজকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হতে পারে, তিনি আসলে ঘর ছেড়েও নিজ ঘরে থাকার অনুভূতি থেকে খুব একটা বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন না!

প্রথমেই অভিনন্দন। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও স্বাগত জানাচ্ছি।

রাসেল ডমিঙ্গো : আপনাকেও ধন্যবাদ। নতুন দায়িত্বে কাজ শুরু করতে সত্যিই খুব মুখিয়ে আছি আমি।

প্রশ্ন : নতুন চাকরি করতে ঘর ছাড়তে হচ্ছে আপনাকে। এর পরও মনে হয় না ঘর থেকে দূরে থাকার অনুভূতি খুব বেশি হবে আপনার।

ডমিঙ্গো : বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফে আপনি ছাড়াও তো আরো তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকান আছেন। সে জন্যই জিজ্ঞেস করছিলাম…।

ডমিঙ্গো : ও হ্যাঁ, এবার বুঝেছি। হা হা হা। একদম ঠিক বলেছেন। নেইল (ম্যাকেঞ্জি, ব্যাটিং কোচ) আছে, আছে শার্লও (ল্যাঙ্গেভেল্ট, পেস বোলিং কোচ)। রায়ানও (কুক, ফিল্ডিং কোচ) তো আছে। ওদের সঙ্গে আমার জানাশোনা অনেক দিনের। কাজেই একই ড্রেসিংরুমে ওদেরকে পাওয়াটা আমার জন্য দারুণ এক কাজের পরিবেশও তৈরি করে দেবে। হ্যাঁ, এটি বলতে পারেন যে বাংলাদেশের চাকরিটা আমাকে ‘হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম’ (ঘরের বাইরের ঘর) ধরনের অনুভূতিই দেবে। এই চাকরির এটিও একটি ইতিবাচক দিক যে ঘরের বাইরে আছি বলে মনেই হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একই ড্রেসিংরুমে আরো কয়েকজন দক্ষিণ আফ্রিকান থাকায় আমাদের আফ্রিকানস ভাষার চর্চাটাও বেশ ভালো চালিয়ে নিতে পারব। হা হা হা। আমাদের আড্ডাও বেশ জমবে।

প্রশ্ন : আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে আপনার ব্যাপারে ভীষণ উচ্ছ্বসিতই মনে হলো। আপনি নাকি বলেছেন আপনার ছুটিছাটার দরকারই নেই কোনো। আপনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়েই পড়ে থাকতে চান। সত্যিই কি ছুটির দরকার নেই আপনার?

ডমিঙ্গো : হা হা হা। এই দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে সত্যিই খুব সম্মানিত বোধ করছি। নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বটি আমি পালন করতে চাই। আর ভালো কাজ করতে গেলে আপনাকে এর পেছনে প্রচুর সময়ও দিতে হবে। সেই সময় আমি দেবও। বাংলাদেশের ক্রিকেট যে উন্নতির পথে আছে, সেটির ধারাবাহিকতা রাখতে হলে নতুন নতুন খেলোয়াড়ও খুঁজে বের করতে হবে। এসব কাজে সময় তো আপনাকে দিতেই হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে এটিও আশা করা হয় যে জাতীয় দলের হেড কোচ ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচও দেখবেন। তা এ ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনাটা একটু জানতে চাই।

ডমিঙ্গো : আমারও ইচ্ছা আছে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ দেখতে যাওয়ার। যেটি বলছিলাম, জাতীয় দল নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনাময় তরুণ খেলোয়াড়ও খুঁজে বের করতে হবে। সেটি করতে গেলে আপনাকে জাতীয় দলের বাইরেও তাকাতে হবে। তা ছাড়া আমার দায়িত্বের মধ্যে জাতীয় দলের পরের পর্যায়ের দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগের ব্যাপার রয়েছে। কাজেই আশা করছি, সম্ভব হলে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচও আমি দেখতে যাব।

প্রশ্ন : একটি বিশ্বকাপ গেল। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও আছে। সেটি সামনে রেখে নিশ্চয়ই এখন থেকেই পরিকল্পনায় নেমে যাবেন?

ডমিঙ্গো : দেখুন, পরিকল্পনা করতে হবে সব কিছু নিয়েই। যেমন বাংলাদেশে গিয়েই আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট। এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজের আরেকটি দল জিম্বাবুয়েও। প্রথম কাজ হলো এই সিরিজ দুটি নিয়ে পরিকল্পনা করা। এরপর ভারত সফর দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও শুরু হয়ে যাবে। আমি মনে করি টেস্টে ভালো করাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সামনে যখন এই কাজগুলো আছে, তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে একটু পরে ভাবলেও চলছে। তা ছাড়া দায়িত্ব নিয়ে অনেক কিছু জানা-বোঝার ব্যাপারও আছে আমার। বাংলাদেশের ক্রিকেট এত দিন দূর থেকে অনুসরণ করেছি। এবার সরাসরি কাজ করব। এই কাজে শেখারও আছে অনেক কিছু। সব একটু বুঝে নিয়ে আশা করি, নতুন বছরের শুরু থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভালো একটি পরিকল্পনা করতে পারব।

প্রশ্ন : জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়েছেন, কিন্তু আপনি শুরুতে এইচপি কিংবা বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হেড কোচ হতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন, তাই না?

ডমিঙ্গো : এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না। (কিছুক্ষণ ভেবে) না, না, আমি সব সময়ই হেড কোচ হতে চেয়েছি।