সিল্কিসিটিনিউজ ডেস্ক:
নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা হরহামেশাই দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে। এর সম্পর্কে লেখালেখি হচ্ছে, অনেক নারী তার অতীতের গোপনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শেয়ার করছেন মানুষের সঙ্গে।
তারা চান, এসব ঘটনা জেনে নারীরা নিজের অবস্থানে সাবধান হয়ে যাক। নিপীড়ন বা লাঞ্ছনার ঘটনা মনে কতটা দাগ কাটে তা ভুক্তভোগী নারীরাই বোঝেন। এখানে নাম না জানা এমনই এক নারী তার পুরনো অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তার আশা, এটা পড়ে মেয়েরা আরো বেশি সাবধান হবেন এবং সচেতন থাকবেন।
ওই নারী লিখেছেন, এ ধরনের ঘটনার বয়ান দেওয়া সোজা কথা নয়। পনেরো বছর পেরিয়েছে। কিন্তু এখনো স্পষ্ট মনে আছে। একটা পাবলিক বাসের এই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা ভোলা সম্ভব নয়। তাও যদি বিশেষ একটা দিনে এমন ঘটে, তাহলে তো কথাই নেই।
কলেজের প্রথম দিন ছিল সেদিন। এমন দিনে বাড়ি থেকে বেরোনো, কলেজের উদ্দেশে রওনা দেওয়া ইত্যাদি সবকিছু মনে থাকে।
বাড়িতে সব সময় বলা হতো যে, বাইরে কখনো একা একা চলবে না। কলেজ মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। তবুও মায়ের চিন্তা যায় না। গাড়ি ছিল। কিন্তু ড্রাইভার ছুটিতে চলে গেছেন। তাকে ফোন দিয়ে তাই পাওয়া যায়নি। কয়েকবার কল করার পর অবশেষে মা হতাশ হলেন। আমাকে অটোরিক্স বা ক্যাব নিয়ে যেতে বললেন। কিন্তু বড় হয়েছি, ঠিক করলাম সবার মতো পাবলিক বাসেই যাবো।
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম। কিন্তু বাসে উঠে অভ্যাস নেই। স্টপেজে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। একে একে তিনটা বাস পেরিয়ে গেলো। একটাও উঠতে পারলাম না, কারণ প্রচণ্ড ভীড়। চতুর্থ বাসটা আসলো মোটামুটি খালি। উঠে পড়লাম। এই প্রথম বাসে ওঠা। অপরিচিত মানুষ, বাসের জানালার মরচে পড়া ফ্রেম, ঘামের গন্ধ সবই সয়ে আসতে থাকলো। সিট পায়নি। তাই দাঁড়িয়ে থাকলাম। একটু পর বুঝতে পারলাম আমার পেছনে আরেক যাত্রী এসে দাঁড়িয়েছেন, পুরুষ যাত্রী। হঠাৎ বুঝতে পারলাম, তিনি খুব বেশি কাছাকাছি দাঁড়িয়েছেন। একটা পর্যায়ে আমার গায়ের সঙ্গে তার গা ছুঁয়ে গেলো। অস্বস্তিবোধ করলাম। এখানেই শেষ নয়, ওই যাত্রীর দেহ আমার দেহের সঙ্গে লেগে যেতে থাকলো। শক্তভাবে তিনি আমার দেহে চাপ প্রয়োগ করলেন। আমার শিঁড়দাড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেলো। গা শিউরে উঠলো। মানুষটি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছে, অথচ তার চেহারাটা পর্যন্তে দেখিনি আমি। তার চেহারা এখন পর্যন্ত মনে করতে পারি না আমি।
এটা আমার জীবনে প্রথমবারের মতো ঘটল। সেই বয়সে এমন ঘটলে তা গোটা জীবনে ভোলা যায় না। পরে এমন ঘটনা অনেকের জীবনে ঘটতে দেখেছি। প্রতিনিয়ত সেই সব গল্প শুনেছি। আমার আরেক বান্ধবী প্রায়ই এক ক্লাসমেটের যৌন নির্যাতনের শিকার হতো। সে কাউকে কিছু বলেনি। আমার এক সহকর্মী তার বাড়ির পুরুষ কালের লোকের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। সে কথা পরের তিরিশ বছরেও ভুলতে পারেননি তিনি।
কিন্তু এর শেষ কোথায়? নারীরা নিশ্চুপ থাকলে এমনটা ঘটতেই থাকবে। সমাজ এদেরকে নিয়ে কথা বলে। কিন্তু কোনো স্পষ্ট সমাধানে যায় না। বিপদটা যার, তাকেই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে।
সূত্র : ফেমিনা