গ্রেফতার এড়াতে চুলে কলপ গোঁফে ছাঁট, পরনে বোরখা

নিজের প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতালে গত ৬ জুলাই অভিযানের পর আত্মগোপনে গিয়ে চুলে কলপ, গোঁফে ছাঁট ও বোরখা পরে চেহারায় ভিন্নতা এনেও শেষ রক্ষা হয়নি মো. সাহেদের। র‌্যাবের জালে অবশেষে তাকে ধরা পড়তেই হল।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ একেক সময় একেক পরিচয় দিয়ে প্রভাব কাটানো ‘ধুরন্ধর’ রিজেন্টের সাহেদের কাঁচাপাকা চুল আর বড় গোঁফ ছিল। বিভিন্ন টেলিভিশনে টক শো’তে এভাবেই দেখা যেত তাকে। কিন্তু বুধবার গ্রেফতারের সময় তার চেহারায় দেখা গেল ভিন্নতা।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেফতার এড়াতে তিনি (সাহেদ) চুলে কলপ করিয়েছেন এবং গোঁফ ছেঁটে ফেলেছেন।

বুধবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। কোমরপুর সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্টের ওপর কালো রঙের বোরখা পরে ছিলেন। সাহেদ গ্রেফতার এড়াতে গোঁফ কেটে ফেলেছিলেন, সাদা চুল কালো করেছিলেন।

গ্রেফতারের পর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে সাহেদকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর উত্তরায় তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান শেষে বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। উত্তরার র‌্যাব সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, সাহেদ অনেক কিছু বলেছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাবে না।

প্রসঙ্গত, সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ ৬ জুলাই র্যা ব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়।

অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।

পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে মো. সাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। সে মামলায় ৯ দিন পলাতক থাকার পর গ্রেফতার হলেন মো. সাহেদ। ওই মামলায় সাহেদকে থানার মাধ্যমে সেই সময় প্রধান আসামিসহ ৯ জন আসামিকে পলাতক দেখিয়ে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আসামিরা হলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী তরিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ খান জুয়েল, মো. শিমুল পারভেজ, দীপায়ন বসু, আইটি কর্মকর্তা মাহবুব, সৈকত, পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব ১. হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব, ২. হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, অভ্যর্থনাকারী কামরুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান।

এসব আসামির মধ্যে সাতজনকে ইতিমধ্যে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

সূত্র যুগান্তর