‘গ্যারামের মায়া ছাড়ি যাওয়া নাগতোছে বাহে’

‘অভাবের সংসারোত মাটি কামড়ে এখানটায় পড়ি আছি আইজ কত বছর হইল। এ্যালা গ্যারামের মায়া ছাড়ি যাওয়া নাগতোছে বাহে। আল্লার দুনিয়ায় কোনটে এ্যাকনা জাগা পামো, কায় সে জাগা দেবে- তাও জানি না।’

কষ্টের সঙ্গে কথাগুলো বলেন রংপুরের গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চরগ্রাম বিনবিনা এলাকার নেরগান মামুদ। তিস্তার ভাঙনে ভিটে হারিয়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নৌকায় তুলে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানোর প্রাক্কালে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

kalerkantho

ভারি বর্ষণ আর দফায় দফায় উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বাড়া-কমার সঙ্গে নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তাপারের মানুষ। গত এক মাসে নদীটির ভাঙন কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা চরের মানচিত্র পাল্টে দিয়েছে। ওই চরগ্রামে বসবাসরত তিন শতাধিক পরিবার আবাদি জমি ও গাছপালাসহ বসতভিটা হারিয়ে এখন নিঃস্ব। এছাড়া সেখানকার প্রায় এক হাজার পরিবারসহ মটুকপুর, চিলাখাল, সাউদপাড়া, কুড়িবিশ্বা, ইচলী, পাইকান হাজীপাড়া, মিনার বাজার, ছালাপাক, মর্নেয়া চরসহ নিম্ন এলাকার প্রায় চার হাজার পরিবার গত ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী এলাকায় ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি।

kalerkantho

গতকাল সোমবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে বিনবিনা এলাকায় দেখা যায়, দফায় দফায় বন্যা-ভাঙনে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। কয়েক শ একর আবাদি জমি পরিণত হয়েছে তিস্তায়। বিনষ্ট হয়েছে সদ্য রোপণ করা আমনের ক্ষেত। ভাঙন অব্যাহত থাকায় বিনবিনার পাকা রাস্তাসহ স্বেচ্ছাশ্রমে  নির্মিত বাঁধ। চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাওয়ায তিস্তার পানি ঢুকে পড়েছে। গ্রামটির প্রায় এক হাজার পরিবার ১৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে।

নদীভাঙনে নিঃস্ব বিনবিনা এলাকার আহাম্মদ আলী, আকবার আলী, মনতাজ কাজি, আবুল কালাম, আলিমুদ্দিন, ইমতিয়াজ, পারভিন বেগম, কামরুজ্জামান, মিলন মিয়া, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ  জানান, গত এক মাস ধরে তিস্তার ভাঙনে তাঁরাসহ গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া  বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ওই গ্রামের আব্দুল মতিন, আসাদ আলী, পেয়ারি বেগম, আকলিমা খাতুন, মকবুল হোসেন, শফিকুল ইসলাম, ইদ্রিস আলী, লাভলু মিয়া, সেতার আলী, আলাউদ্দিন, মোস্তফা মিয়াসহ প্রায় এক হাজার পরিবার ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে পানিবন্দি।

kalerkantho

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলীমা বেগম বলেন, ‘ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে টিনসহ আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

kalerkantho

কোলকোন্দ ইউনিয়েনর চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, এবার তিস্তার ভাঙনে তার ইউনিয়নের বিনবিনা চরের তিন শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে রয়েছে। এসব মানুষ ত্রাণ নয়, ভাঙন রোধে ভালো পদক্ষেপ চান।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ