গোমস্তাপুরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ আদালতের তদন্তের নির্দেশ

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি: 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সারোয়ার জাহানের দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ায় তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ আদেশ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর আমলী আদালতের বিচারক আব্দুল মালেক। বিষয়টি আমলে নিয়ে গোমস্তাপুর আমলী আদালতের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট স্বপ্রোণোদিত হয়ে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক আব্দুল মালেক স্বপ্রনোদিত হয়ে এ ঘটনায় একটি মিস কেস করেন। যার নম্বর ক্রিমিনাল মিস কেস-১/২০২০। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা মতে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন বিচারক। আদেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নি¤œ নহেন এমন কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ২৯ অক্টোবর ২০২০’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পুলিশ সুপার চাঁপাইনবাবগঞ্জকে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানান, আদালতের আদেশ আমরা হাতে পেয়েছি এবং নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোমস্তাপুর (সার্কেল) জাহিদুর রহমানকে এবিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যথা সময়েই তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে বলেও জানান তিনি।

গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান জানান, এবিষয়ে আমাকে পুলিশ সুপার অফিস থেকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে, স্বপ্রনোদিত হয়ে আদালতের একজন বিচারকের এ ধরনের আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির আইনজীবীরাসহ এলাকাবাসী ও অভিযোগকারীরা।

তারা বলছেন, করোনাকালে এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তে যদি সত্যতা বেরিয়ে আসে তবে তা হবে দৃষ্টান্তমূলক। যা আগামীতে অন্য বিচারকদের অনুপ্রাণিত করবে। এদিকে এসব অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে এলাকাবাসী ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সালাহউদদীন আহম্মেদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালকের নির্দেশে আরেকটি তদন্ত শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা সিভিল ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে শুরু করেছে সেই তদন্ত। গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে এই তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সিভিল সার্জনকে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে অভিযোগকারীদের অভিযোগ, সিভিল সার্জন তদন্তের নামে অভিযুক্ত ইউএইচএফপিও ডা. সারোয়ার জাহানকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। যেহেতু ডা. সারোয়ার জাহানের এসব অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ পক্ষান্তরে গণমাধ্যমে খোদ সিভিল সার্জনের ওপর দায় চাপিয়েছেন তিনি নিজেই।

তাই এসব অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সিভিল সার্জন, ইউএইচএফপিও ডা. সারোয়ার জাহানের পক্ষ হয়ে তদন্ত করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিযোগকারীরা। তাই প্রশ্নবিদ্ধ ও বির্তকিত এই তদন্ত কমিটি বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত টাস্কর্ফোস অথবা মহাপরিচালক বা বিভাগীয় পরিচালকের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

অভিযোগকারীরা আরও জানান, তদন্তের সময় গত ২১ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারীদের কোনো লিখিত বক্তব্য ও স্বাক্ষর নেননি সিভিল সার্জন। মৌখিক বক্তব্য নিয়েই তড়িঘড়ি করে তদন্তের কাজ শেষ করছেন। শুধু তাই নয় ঘটনাস্থলে একদিন গেলেও, পরবর্তীতে জেলা সদরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বসে তদন্তের কাজ করেছেন। সেখানেও তিনি কোন লিখিত বক্তব্য ও সাক্ষর গ্রহণ করেননি। ফলে এই তদন্ত নিয়ে যেমন একদিকে প্রশ্ন উঠেছে তেমনি, ডা. সারোয়ারের সাথে সিভিল সার্জন নিজেও যে এইসব অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত কিনা সেই বিষয়টিও এখন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনায় এসেছে।

এদিকে, তদন্ত শুরুর পরে ডা. সারোয়ার জাহান নিজেকে বাঁচাতে তার সরকারি বাসভবন থেকে এসি খুলে হাসপাতালের ভান্ডারে জমা দিয়েছেন এবং গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে ফুল বাগান থেকে ভেষজ বাগানের কর্তনকৃত অবশিষ্ট কিছু গাছের গুড়িগুলো তার লোকজন দিয়ে উঠিয়ে আলামত নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর, হাসপাতালের ষ্টাফ এবং মুল অভিযোগকারী আরএমও ডা. সালাহ্উদদীন আহম্মেদের।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান,‘ স্বাস্থ্য বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকের নির্দেশে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তবে অভিযোগকারীদের যে অভিযোগ তা তিনি অস্বীকার করে জানান, অভিযোগকারীদের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেয়া হয়েছে।

ডা. সারোয়ার জাহানের অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালতের আদেশের বিষয়ে তিনি জ্ঞাত নন বলে জানান। তবে অভিযুক্ত ডা. সারোয়ার জাহানের সাথে আদালতের আদেশের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনেছেন বলে জানান ।