গোদাগাড়ীর চর থেকে জেএমবির শীর্ষ নেতা আমিনুলসহ গ্রেফতার ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোদালকাটি মধ্য চর থেকে জেএমবির শীর্ষ নেতা আমিনুলসহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এ সময় বোমা তৈরির সরঞ্জাম, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।  বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (৩১ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার জেএমবি সদস্যরা হলেন- গোদাগাড়ী উপজেলার আলীপুর বারইপাড়া গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৩২), চর বোয়ালমারী আদর্শগ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন ওরফে মুরসালিন (২২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম কোদালকাটি মধ্যচরের রুস্তম আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম, গোলাম রব্বানীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩০) ও আইনুদ্দিন মন্ডলের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০)।

র‍্যাব জানায়, গ্রেফতার হওয়া জেএমবি সদস্যরা ওই এলাকায় সংঘবদ্ধ হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব অভিযান চালায়। তাদের কাছ থেকে ম্যাগজিন ও চার রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ২০০ গ্রাম গানপাউডার, সাতটি হ্যান্ডনোট, চারটি জিহাদি বই, দু’টি করে মোমবাতি, মোবাইল ফোন ও মেমোরি কার্ড, তিনটি সিমকার্ড এবং একটি করে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। আটক পাঁচজনের মধ্যে আমিনুল ইসলাম জেএমবির গোদাগাড়ীর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মেজর আশরাফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এ চরে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছিল সংগঠনটির সদস্যরা। সমন্বয়ক আমিনুল ইসলামের নির্দেশেই গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ তথ্য পাওয়ার পর আমিনুলের খোঁজে নামে র‌্যাবের গোয়েন্দারা।

অবশেষে র‌্যাব জানতে পারে, চর বোয়ালমারী এলাকায় অবস্থান করছেন জেএমবি নেতা আমিনুল। সেখানে অভিযান চালিয়ে আমিনুল ও মোশাররফকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর কোদালকাটিতে অভিযান চালিয়ে অন্য তিনজনকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোদাগাড়ীর জেএমবি’র আঞ্চলিক শীর্ষ নেতা আমিনুল ইসলাম জানায় যে, সে তার মামা (আবু সাঈদ-পলাতক জেএমবি নেতা) এর মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। জেএমবি সংগঠনে যোগদানের পর সে গোদাগাড়ী ডাইংপাড়া গোলচত্ত্বরের পাশে ছদ্মবেশী সুতার ব্যবসার আড়ালে সাধারণ লোকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু চলতি বছরের ১৩ ও১৪ মে ২০১৮ তারিখ গোদাগাড়ী ও বেলপুকুর থানায় তাদের সংগঠনের সক্রিয় কিছু সদস্য র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হলে আমিনুল আত্মগোপন করে এবং সংগঠনকে সুসংহত করার জন্য গোদাগাড়ী থানার ওপারস্থ সীমান্তবর্তী এলাকা বগচর, চর কোদালকাঠি, চর বোয়ারমাড়ী ও মধ্যচরে আত্মগোপন করে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। সেখানে অবস্থান করে জেএমবি’র সদস্যদের বিভিন্ন নির্দেশনা, ইয়ানতের টাকা ও উগ্রবাদী বই সংগ্রহ ও বিতরণএবং সংগঠনের বিবিধ কার্যক্রম পরিচালনাকরতে থাকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমিনুলের অন্যতম সহযোগী মোশারফ হোসেন মুরসালিন স্বীকার করে যে, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে আমিনুলের দোকান হতে সুতা ক্রয়কে কেন্দ্র করে তার সাথে পরিচয় হয় এবং পরবর্তীতে তার মাধ্যমে সে জেএমবি সংগঠনে যোগ দেয়। সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জেএমবি’র পলাতক সদস্যদের আশ্রয়, জেএমবি সংগঠনের সদস্যদের ভারত-বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক বর্ডার পারাপার এবং সংগঠনের জন্যঅস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করাই ছিল তার প্রধান কাজ (তার বাড়ী বাংলাদেশ-ভারত সীমানা প্রাচীরের খুব নিকটবর্তী)। এছাড়াও সে ছদ্মবেশী ডাক্তারী পেশার আড়ালে চরাঞ্চলে সংগঠনকে নিয়মিত ইয়ানতের টাকা প্রদান ও সরলমনা মানুষকে সংগঠনে যোগ দেওয়ার দাওয়াত দিত।

ইসমাইল হোসেন,  রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মতিন মতিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, তারা ২০১৫ সালে স্থানীয় সাহাবুল(র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার) এর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবিতে যোগদান করে। পরবর্তীতে তারা এই সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দলীয় মিটিং, উগ্রবাদী বই বিতরণ, ইয়ানতের টাকা প্রদান ও আদায় ও সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য দাওয়াত ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

তাই তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান  র‌্যাব।

স/আর