গোদাগাড়ীতে রেলের জমি দখল করে আ.লীগ নেতাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটে রেলওয়ের প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের .নেতারা। কাঁকনহাট স্টেশনের যায়গা দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে ব্যক্তিমালিকাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয়েছে কাঁকনহাট প্যারামেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড বঙ্গবন্ধু ওলটারনেটিভ হোমিও হাসপাতাল।
এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝেও দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। এরই মধ্যে খবর পেয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তারা সরেজমিন গিয়ে ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি গোদাগাড়ী থানায় চারজনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সেটি গতকাল পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগের ফিল্ড কানুনগো মহসিন আলী গত ১৭ সেপ্টেম্বর এ অভিযোগটি করেন।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাঁরা হলেন, কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মিলন (৩২), ৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি বকুল (৩৫), ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা মইদুল ইসলাম ও ওয়ার্ড সদস্য শরিফুল ইসলাম। এই চার নেতা ও তাঁদের লোকজন মিলে রেলওয়ের জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন।

ওই অভিযোগের একটি কপি কাছে গতকাল এসে পৌঁছেছে। তবে গোদাগাড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ধরনের অভিযোগের কথা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, রেলওয়ের জায়গা দখল করে এই চার নেতা নিজেদের বাণিজ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ওই কাজটি বন্ধ করে দিতে গেলে তারা নিজেদের লোকজনকে নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগের ফিল্ড কানুনগো মহসিন আলীকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে মসহিন আলী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসেন। এরপর তিনি থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করে চারজনের বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁরা রেলওয়ের জায়গা দখল করে ভবন গড়ে তুলছে। এটি তারা করতে পারে না। প্রায় ৫ হাজার বর্গফুটের ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে তারা। যার আনুমানিক মূল্য অন্তত ২ কোটি টাকা। সেই জায়গাটি উদ্ধারে আমরা এরই মধ্যে উচ্ছেদ অভিযানের প্রক্রিয়াও হাতে নিয়েছি। পাশাপাশি থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মামলাটি রেকর্ড করা হয়েেেছ কি না বলতে পারব না।’

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কাঁকনহাট স্টেশনের উত্তর পাশে বিশালাকার জায়গাটি দখল করে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। প্রাচীরের ওপর পাশে চলছে পাকা ভবন নির্মাণের কাজ। কিন্তু গত দুইদিন ধরে কাজটি বন্ধ আছে বলে জানান স্থানীয়রা।

তাঁরা আরো জানান, স্থানীয় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বেই ওই জায়গাটি দখল করা হচ্ছে। তার ইন্ধনেই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা জোর করে যায়গাটি দখল করে সেখানে নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। এ নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো তাদেরও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপকের (জিএম) কাছে লিখিত অভিযোগ করে স্থানীয়রা। এরপর গত ১৬ তারিখ জিএম হারুন-অর-রশিদ নিজে সরেজমিন পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পান। পরে জিএমের নির্দেশে ওই কাজটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ের ভূ-সম্পদ বিভাগ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জমি দখলকারী মইদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘জায়গাটির কিছু অংশ আমরা রেলওয়ে থেকে কৃষি ফসল উৎপাদনের জন্য লিজ নিয়েছি। আর কিছু অংশ এখনো রেলওয়েরই আছে। সেই জায়গাতে ভবন করা হচ্ছে। এখানে জোর করে দখলের বিষয়টি সঠিক নয়। রেলওয়ে চাইলে আমি আমার প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিব।’
জানতে চাইলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির বলেন, ‘আমি ওই জায়গা দখলের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। কারা করেছে বলতে পারব না।’

তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পতি কর্মকর্তা নূরুজ্জামান বলেন, ‘লিজের বিষয়টি জানা নাই। তারা জোর করে জায়গা দখল করে এখন লিজের কথা বলছে। তবে রেলওয়ের সম্পত্তি লিজ নিলেও সেখানে পাকা ভবন করার কোনো অধিকার দেওয়া থাকে না। অস্থায়ী ভবন গড়ে তোলার সর্ত দেওয়া হয়। যদি তারা রেলওয়ের কিছু অংশ জমি লিজ নিয়েও থাকেন, তাহলে সেই সর্তটিও লঙ্ঘন করেছেন। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘রেলওয়ের বিশালাকার সম্পত্তি দখল করে সেখানে পাকা ভবন তৈরী করা হচ্ছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমি দ্রুত এই ভবন উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’