গোদাগাড়ীতে মাদক সম্রাট মোফার বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে এক নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী শীর্ষ মাদক সম্রাট ও পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন মোফার বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করে বিপাকে পড়েছেন এক নারী। নির্যাতনের পর থানা মামলা না নেওয়ায় মিনা খাতুন (৩৩) রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে যান ন্যায়বিচার চাইতে। এসপির নির্দেশের কয়েকদিন পরও থানা মামলা করেনি।

বিভিন্ন মাধ্যমে অবগত হয়ে এসপির পুণরায় দেওয়া কঠোর নির্দেশের পর থানার ওসি মামলা নিতে বাধ্য হলেও এই মামলাটি নিয়ে পুলিশ নানান কাহিনীর জন্ম দিয়েছে।

নির্যাতিত মিনা খাতুনের অভিযোগ, এসপির নির্দেশে, গোদাগাড়ী থানার ওসি মামলা নিলেও নির্যাতনকারী মাদক স¤্রাট মোফাকে কৌশল করে জামিনে বের করে এনেছে। এখন জামিনে এসে মোফা তাকে ঘরছাড়া করতে উঠে পড়ে লেগেছে। দুই সন্তানসহ তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলেছে। ফলে ডিআইজি ও এসপির কাছে দরখাস্ত করে দুই সন্তানসহ নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন মিনা খাতুন।

রাজশাহীর ডিআইজি ও এসপির কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে পৌরসভার মহিষালবাড়ি মহল্লার বানী ইসরাইলের স্ত্রী ভিকটিম মিনা খাতুন বলেন, পারিবারিক বিষয়ে তার শাশুড়ীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির কারণে গত ৪ মে শাশুড়ীর পক্ষ নিয়ে মোফাজ্জল হোসেন মোফা কাউন্সিলর , তার ছেলে রবিউল ইসলাম রবি ও মেয়ে ঝরণা খাতুন তাকে ঘর থেকে বের করে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করেন। লাঠি ছাড়াও তিন জনের লাথি ও কিষ ঘুষিতে মিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। নির্যাতনে আমার একটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা যায়, প্রতিবেশিরা উদ্ধার করে মিনাকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরের দিন কিছুটা সুস্থ হয়ে মিনা মামলা করতে থানায় গেলে ওসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলা না নিয়ে তাকে থানা থেকে বের করে দেন। কয়েকদিন পর মিনা এসপির কাছে গেলে পুলিশ সুপার মিনার পুরো শরীরে নির্যাতনের দগদগে চিহৃ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ওসিকে মামলা রেকর্ডের নির্দেশ দেন। কিন্তু ওসি তাতেও মামলা না নিয়ে মোফারই সহযোগী কয়েকজনের হাতে মিনাকে তুলে দেন মীমাংষা করার জন্য। শেষে ৪৫ হাজার টাকায় মীমাংষা করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

এদিকে বিষয়টি এসপি জানতে পেরে পুণরায় ওসিকে মামলা রেকর্ডের কঠোর নির্দেশ দিলে গত ১৫ মে থানা পুলিশ মিনার মামলা রেকর্ড করেন।

মিনার আরও অভিযোগ, মামলা রেকর্ডের পরও মাদক সম্রাট মোফাসহ আসামিরা প্রকাশ্যেই ঘুরেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমানের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাজারে আসামি ঘোরাঘুরি করেছে। পরে পুলিশ মোফা ও তার ছেলেকে কাগজ কলমে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোফার ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে আদালতে নিয়ে গিয়ে সম্প্রতি জামিন করিয়ে নিয়ে আসেন। তবে আরেক আসামি মোফার মেয়ে ঝরণা খাতুনকে এখনো গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। ভিকটিমের আরও অভিযোগ মোফা মাদক সম্রাট ও থানা পুলিশের পুরনো দালাল। তার সঙ্গে থানা পুলিশের গভীর সম্পর্ক থাকায় মামলা করেও বিপাকে পড়েছেন তিনি। পুলিশ এ বিষয়ে মোফার পক্ষ থেকে সব তৎপরতা চালাচ্ছে।

এদিকে লিখিত অভিযোগে মিনা আরও জানিয়েছেন, জামিনে আসার পর থেকেই মোফা ও তার সহযোগীরা মিনাকে অব্যাহতভাবে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তাকে। মিনা খাতুন এরই মধ্যে তিনবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে গোদাগাড়ী থানার ওসি খাইরুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন। তাকে গালাগালি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করলে তিনি কোনভাবেই ন্যায়বিচার পাবেন না এবং তার দুই সন্তানসহ নিজের জীবণ সংশয় রয়েছে বলেও মিনা খাতুন তার অভিযোগে বলেছেন।

মামলাটি অন্য কোন সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোরও দাবি করেছেন তিনি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, মোফা ও তার ছেলেকে উপজেলার বালিয়াঘাটা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনার পর আদালতে চালান করা হয়েছে। মোফার ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে আদালতে পৌঁছানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

বাদীর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডির আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিডি নেওয়া না নেওয়া ওসি সাহেবের বিষয়। এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তবে মিনা খাতুনসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন তাদের কাছে প্রমাণ আছে মোফা ও তার ছেলেকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়নি। শুধু কাগজ কলমে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে।