গোদাগাড়ীতে প্রধান শিক্ষকের হাতে মারধরের শিকার নারী শিক্ষক চাপের মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের হাতে মারধরের শিকার নারী শিক্ষক এখন চাপের মুখে আছেন। ঘটনাটি মীমাংসা করে নিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, বেশি চাপাচাপি করছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাবিয়ার রহমান সাবু। কয়েকদিন আগে তিনি স্কুলে গিয়ে ওই নারী শিক্ষককে চাপ দিয়ে এসেছেন।

গত ১ জানুয়ারি উপজেলার ক্ষুদ্র শাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরম হোসেনের হাতে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত হন সহকারী শিক্ষক সাইদা ইসলাম। শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার সময় টাকা না নেওয়ার কারণে প্রধান শিক্ষক তাঁকে পেটান। ঘটনার পর সাইদা ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে সাইদা ইসলাম এ নিয়ে গোদাগাড়ী থানায় এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লাইলা তাসলিমা নাসরিন অভিযোগের তদন্ত করালে সত্যতা পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রাজশাহী বিভাগের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদের কাছে গেলে তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর আকরম আলী এখন মীমাংসার জন্য ছুটছেন। তিনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাবিয়ার রহমানকে দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষককে চাপ দিচ্ছেন। সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা হওয়ার পরও শিক্ষক নেতা সাবিয়ার রহমান ওই স্কুলে গিয়ে একটি ‘সালিশ বৈঠক’ করেছেন। সেখানে আকরম হোসেনকে দিয়ে সাইদা ইসলামের কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। এই সালিশ বৈঠকে উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান শাহীনকেও ডাকা হয়েছিল। তবে তিনি যাননি।

বিষয়টি স্বীকার করে শাহজাহান শাহীন বলেন, ‘সাইদা ইসলাম আমাকে ফোন করে বলেছিলেন বিষয়টা নিয়ে সবাই সালিশে বসতে চাচ্ছেন, আমি যেন যাই। কিন্তু যেহেতু এটা নিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে গেছে সে জন্য আমি যাইনি। যেখানে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেখানে সালিশ চলে না। সে কারণেই আমি যাইনি।’
ভুক্তভোগী শিক্ষক স্বীকার করেন অভিযুক্ত আকরম আলী তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ছোট চাকরি করি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাবিয়ার রহমান এ বিষয়ে দায়িত্ব নিচ্ছেন। আমি অভিযোগ তুলে নিলে আকরম আলী চাকরি ফিরে পাবেন। বিভাগীয় মামলা থেকেও দায়মুক্তি পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে আকরম আলীকে এই স্কুল থেকে দূরে বদলি করা হবে বলে আমাকে আস্বস্ত করা হচ্ছে।’ তবে তিনি এখনও অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি বলে জানিয়েছেন।

সাইদা ইসলামকে চাপ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাবিয়ার রহমান বলেন, ‘আমি সমিতির নেতা, একজন শিক্ষকের চাকরি চলে যাচ্ছে। তাঁর জন্য যদি এ টুকু করে অন্যায় করে থাকি, তাহলে অন্যায়।’

সালিশ বৈঠকে বসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটা সালিশ ছিল না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে ওই স্কুলটির সভাপতি জামায়াত করেন। সেটা আমাদের তদন্ত করতে বলেছিল। আমরা সেটাই দেখতে গিয়েছিলাম।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লাইলা তাসলিমা নাসরিন বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। সাইলাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে শুনিনি।’ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রাজশাহী বিভাগের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ রকম অনেক ঘটনা ঘটে। অভিযোগ করার পরও অনেক শিক্ষক চাপের কারণে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। যেহেতু একজন নারী শিক্ষককে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, সে জন্য আমরা বিষয়টা গুরুত্ব সহকারেই দেখছি।’

স/আর